প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১’ র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানীং মাঠে নেমেছে। কিন্তু ধর্মের নামে দেশে কোন ধরণের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার এই হুঁশিয়ারি এমন সময়ে এলো যখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে ইসলামপন্থী দলের একটি অংশ।
প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিল অনেকগুলো ইসলামপন্থী দল। অক্টোবরের শুরু থেকেই ভাস্কর্য তৈরির প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি দল ঢাকার কয়েকটি জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে।
কিন্তু খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হক গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। পনেরোই নভেম্বর এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন মি. হক।
তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। তার ওই বক্তব্য সরকারি দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি করে।
এরপর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে।
২৮শে নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বললেন, “আমি কোন পার্টির নাম বলছি না, কোন নেতার নাম বলছি না…. কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব”।
গত ২০১৪ সালে এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করা হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেই বক্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, তাহলে কোন ভাস্কর্য থাকতে পারে না”।
তবে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কোন দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মেয়াদে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ করেছে, অতীতে কোন সরকারই তা করেনি।
তিনি কিছু বর্ণনাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ”আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি, ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চারু করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেয়া হয়েছে।। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলন, ”তারপরেও ১৯৭১’ র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানীং মাঠে নেমেছে। ”
তিনি বলেন, ”বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান-সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।”
”এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরণের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হলেও সামনের বছর মহামারি না থাকলে যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
যুব শক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ”তোমরা তোমাদের পূর্বসূরিদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনোই ভুলে যেও না। তাদের উপহার দেয়া লাল-সবুজের পতাকার অসম্মান হতে দিও না”। সূত্র- বিবিসি