জিপি স্বাস্থ্যঃ
বর্ণনা ( Description) :
সব ধরনের সাপের কামড় থেকে সাধারণ প্রতিক্রিয়ায় মানুষ তিনভাবে মারা যেতে পারে।
১। সাপের কামড় টের পেয়ে বা সাপ দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে তার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।
২। সাপ বিষধর না হলেও এদের দাঁত বা মুখ- গহবরে নানা ধরনের মারাত্মক জীবাণু (যেমন টিটেনাস) থাকে তা থেকে ক্ষতের সৃষ্টি ও টিটেনাসে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু বরণ করতে পারেন।
৩। প্রকৃত বিষধর সাপের দংশনে মারা যাওয়া ।
জেনে রাখা ভালো যে অনেক সাপই বিষধর নয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে নির্বিষ সাপের কামড়েও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ায় বিপদের সম্ভাবনা থাকে। আর যে-সব সাপ বিষধর তাদের কামড়ে প্রতি বছরই বহু লোকের মৃত্যু ঘটে।
সাধারণতঃ সাপের বিষ তিন ভাবে দেহকে আক্রান্ত করে : ‘হেমোটক্সিন্স’ (haemotoxins) হল সেই বিষ, যেটা রক্তের লোহিত কণিকাকে বিভক্ত করে (haemolyse) অথবা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। নিউরোটক্সিন্স ( neurotics) নার্ভকে আক্রান্ত করে, যার ভয়াবহ পরিণতি হল যেসব পেশীর সংকোচন প্রসারণে আমরা খাবার গিলতে পারি বা নিঃশ্বাস নিতে পারি – সেগুলি অকেজো হওয়া। কার্ডিওটক্সিন্স (cardiotoxins) – এটি হৃদযন্ত্রকে সরাসরি আক্রমণ করে এবং রক্ত চলাচল বন্ধ করে দি নালী তাদের বিষ দাঁতে প্রবেশ করে। বিষধর সাপের দাঁত অনেকটা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ এর মত যা দিয়েতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য নানাভাবে সাপের বিষ দেহকে আক্রান্ত করে যা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার মত দেখা যায় । কিন্তু কেন সাপের বিষে মানুষ মারা যায়? বা আসলেই সাপের বিষ কী? সাপের জ্বিহ্বার নিজে কিংবা চোয়ালের দুই পাশে একজোড়া রূপান্তরিত প্যারোটিড গ্রন্থি থাকে যাদের কাজ হলো বিষ উৎপন্ন ও সংরক্ষণ করা। এই বিষ মূলত একধরনের রূপান্তরিত লালা। এই গ্রন্থি থেকে অতি সূহ্ম তারা বিষ ঢেলে দেয়।
বিষ প্রয়োগ করার পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে মাত্র ২০ সেকেন্ডে এবং প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে লালাগ্রন্থির নিঃসরনে (salivary secretion), সাধারন ভাষায় বলতে গেলে সাপের saliva, যা কিনা সাপের শিকার, প্রতিরক্ষা এবং খাদ্য পরিপাকের কাজে সাপ নিজে ব্যাবহার হয়ে থাকে। সাপের বিষ অনেক গুলো Enzyme এর দ্বারা তৈরি – যার ভেতর রয়েছে – phospholipidase, protease, hyaluronidase, ATPase, cholinesterase, lecithinase, ribonuclease, deoxyribonuclease ইত্যাদি । বিষের গঠন- প্রানীদের দেহে উৎপন্ন বিষের মধ্যে সাপের বিষ খুব জটিল আর বহু এনজাইমে ভরা। সাপের বিষে 20 টির বেশী এনজাইম পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত ।
( সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- গোখরা গোত্রের সব সাপ ও কিছু ভাইপার থেকে ফসফোমনেসটেরেজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে ,যার কার্যকারিতা ও গুনাগুনের জন্য আরও অনেক গবেষযায়ী কাজ চলিতেছে । ( কিংন্স ইন্সটিটিউট এন্টিভেনম , ভারত ) টক্সিকলজিস্টদের তথ্য মতে আমাদের দেশের কোবরা ছাড়া সব সাপ ই যথেষ্ট ভালো। তাদের দংশনে মানুষ কে কিছু সময় দেয় বাঁচার জন্য ।
লক্ষণ (Symptom) :-
সাপে কামড়ালে নিচের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে পারে ;-
১। কামড়ের কাটাদাগ থেকেও আপনি বুঝতে পারবেন দংশন করা সাপটি বিষধর কি না। যদি সাপের কামড়ানো জায়গায়- প্রায় এক ইঞ্চি ব্যবধানে দাঁতের চিহ্ন দেখা যায়। মাঝে মাঝে কাটা স্থান অনেক স্পষ্ট হয়, এ রকম হলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে কোনো বিষধর সাপ দংশন করেছে ( তবে ছোট কেউটে প্রজাতির দাঁতের কামড় দেখা যায়না ), আর যদি কামড়ের দাগ-অধিক খাড়া বা অধিক চন্দ্রাকার হয় সাপটি বিষধর নয়।
২। বেশির ভাগ বিষধর সাপের দংশনের ১৫ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত লক্ষণগুলো দেখা যায় । তবে কিছু সাপের বেলায় তা ভিন্ন রকম দেখা যায়, যেমন শাকিনী কিংবা চিতি সাপের দংশনে -.কামড়ানোর জায়গা কোন ক্ষত,ঘা,ব্যাথা ও ফুলে উঠার লক্ষন দেখা যাবে না। কামড়ানোর বেশ কয়েক ঘন্টার মধ্যে এর বিষের লক্ষন দেখা নাও দিতে পারে তবে যখন লক্ষন দেখা দেবে তখন সব উপসর্গ একবারে দেখা দেবে।
৩। কামড়ের ৭-১২ঘন্টার মধ্যে পাকস্হলী এবং হাড়ের গাঁটে গাঁটে প্রচণ্ড ব্যাথা হবে ।
৪। সাধারন লক্ষণ- ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া–চামড়াতে সাপের দাঁতের দাগ এবং সেই জায়গাটা ফুলে যাওয়া,দংশনের জায়গাতে তীব্র যন্ত্রণা,জ্বালা ভাব,সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়া ( সকলের বেলায় নয় ),মাথা ঘোরা,চোখে ঝাপসা বা ডাবল দেখা ,অত্যাধিক ঘাম হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া,জ্বর,বমি ভাব বা বমি হওয়া, অসাড়তা বা ঝিঁ- ঝিঁ ধরা,নাড়ীর গতি বেড়ে যাওয়া ( আর এ সব লক্ষণ ৫০% বেশী দেখা দিবে যদি আক্রান্ত ব্যাক্তি মানসিক ভাবে বেশী ভয় পেয়ে থাকেন ) ।
৫। মারাত্মক বিষধর সাপের কামড়ে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে ;- অজ্ঞান হয়ে চোখের পাতা অর্ধখোলা বা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখে একই জিনিস দুইটি দেখা,মুখের প্যারালাইসিস বা মুখ খুলতে অক্ষমতা,জিহ্বা বের করতে অক্ষমতা,বুকের মাংসপেশির প্যারালাইসিস/ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া,আক্রান্ত স্থান থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হওয়া,খিচুনী, বমি, মাথা ঝিমঝিম হওয়া,হাত পা অনিচ্ছাকৃত কাপাকাপি করা,প্রস্রাব আটকে যাওয়া, প্রস্রাবের রঙ কালো হওয়া,গ্যাগ রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাওয়া, টেন্ডন রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া । মোট কথায় শরীরের সম্পূর্ণ স্নায়ু অবশ হয়ে গেলে যে লক্ষণ দেখা দেয় তার সব কয়টিই দেখা দিবে ।