জিপি নিউজঃ শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মত এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে চায় বাংলাদেশ। গত আসরের ন্যায় এবারও ফাইনালে মুখোমুখি গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও রানার আপ বাংলাদেশ। টি-২০ ফর্মেটে গত আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হেরে ফাইনাল শিরোপায় চুমু খাওয়া হয়নি টাইগারদের। দু’বছর পর ও টানা দ্বিতীয়বারের মত আবারো এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। এবারও তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। এবার আর শিরোপা জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না মাশরাফির দল। প্রতিশোধের আগুনে ভারতকে পুড়িয়ে এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়তে চায় বাংলাদেশ। দুবাইয়ে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
শিরোপা জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর মিশন নিয়ে এবারের এশিয়া কাপে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ২০১২ ও ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে টাইগাররা। কিন্তু দু’বারই শিরোপা বঞ্চিত হয় তারা। প্রথমবার পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে এবং পরের বার টি-২০ ফরম্যাটের আসরে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হারে টাইগাররা।
গেল আসরে শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ এখনো বাংলাদেশের স্মৃতি পটে বিদ্যমান। সেই স্মৃতি ভুলে যাওয়ার দারুন এক সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। চিত্রটা একেবারে ২০১৬ সালের মত। এশিয়া কাপের ফাইনাল-বাংলাদেশ বনাম ভারত। ঐবার ছিলো টি-২০ ফরম্যাট, এবার ওয়ানডে ফরম্যাট। তবে ফরম্যাট নিয়ে যতটা না চিন্তা, তার চেয়ে বেশি চিন্তা চকচক করা ট্রফিটি নিয়ে। এবার যে, শিরোপা চাই-ই-চাই। এজন্য ভারতের বিপক্ষে প্রতিশোধই নিতে হবে বাংলাদেশকে। গেল আসরে শিরোপা জিততে না পারার প্রতিশোধ। তবে খেলায় ‘প্রতিশোধ’ বলতে কিছু নেই। তারপরও সেই ‘প্রতিশোধ’ নিতে গিয়ে যদি এশিয়া কাপের ট্রফি মাশরাফি হাতে ওঠে তবে প্রতিশোধই ভালো।
তবে ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উজ্জীবিত পারফরমেন্স তেমনই আভাস দিচ্ছে। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাকে হারিয়ে এবারের এশিয়া কাপে যাত্রা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। পরের দু’ম্যাচে হোচট খেলেও, থমকে যায়নি মাশরাফির দল। সুপার ফোরের শেষ দু’ম্যাচে প্রশংসা কুড়ানোর মত জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের হারের বদলা কড়ায়-গন্ডায় নিয়েছে বাংলাদেশ। বদলা নিতে কিছুটা বেগ হতে হয়েছিলো টাইগারদের। কিন্তু সেই বেগে একটুও চিড় ধরেনি বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে। সেটির প্রমাণ মিলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। শুরুতে ব্যাকফুটে চলে গেলেও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ৯৯ ও মোহাম্মদ মিথুনের ৬০ রানের উপর ভর করে ২৩৯ রানের লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
সেই পুঁজিতে কিভাবে লড়াই করতে হয়, সেটি বিশ্বকে দেখিয়েছে বাংলাদেশের বোলার, ফিল্ডার ও অধিনায়ক। বোলারদের সঠিকভাবে আক্রমনে এনে নিজের অধিনায়কত্বের ঝলক দেখিয়েছেন মাশরাফি। পাশাপাশি ফিল্ডারদের রান বাঁচানোর তাগাদার সাথে ক্যাচ নেয়ার দুরন্তপনা তো ছিলোই। তবে সেরা ক্যাচের তকমা পেয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। মিড উইকেটে পাকিস্তানের শোয়েব মালিকের যে ক্যাচটি নিয়েছেন ম্যাশ, এখনও অবধি এবারের আসের সেরা ক্যাচ এটি। মুলত ঐ ক্যাচটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ঐ যাত্রায় মালিক বেঁেচ গেলে, বাংলাদেশের কপালে কি ঘটতো তা ভবিষ্যতই বলে দিতো। তবে দলগত পারফরমেন্সে ভবিষ্যত বলেছে- পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ।
এবার এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার পালা বাংলাদেশের। কিন্তু ফাইনালে যে, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। যারা কি-না পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই প্রতিপক্ষকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে। বিশেভাবে চিরপ্রতিন্দ্বন্দি পাকিস্তানকে পাত্তাই দেয়নি টিম ইন্ডিয়া। গ্রুপ পর্বে ৮ উইকেটে ও সুপার ফোরে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে হারায় ভারত।
ভারতের প্রধান শক্তি ব্যাটিং লাইন-আপ। কিন্তু এবার বোলিং-টাও হচ্ছে বেশ। তাই প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি ভারতকে। অবশ্য সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে ব্যাপক পরিবর্তন এনে খেলতে নেমেছিলো টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারেনি তারা। ম্যাচটি অমীমাংসিতভাবেই শেষ হয়।
তারপরও পুরো আসরে এখন পর্যন্ত ভারতের পারফরমেন্স ভাল। যেটা ভালো জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তাই তো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পরই ভারতকে নিয়ে চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন ম্যাশ। ভারতকে শক্তিশালী দল বলে অ্যাখায়িত করে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা জানি ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী দল। আমাদের সাকিব এবং তামিম নেই। তারপরও আমি আশা করবো ফাইনাল ম্যাচে ছেলেরা তাদের সেরা পারফরমেন্সই প্রদর্শন করবে।’
শিরোপা লড়াইয়ে সেরা পারফরমেন্স করতে মুখিয়ে আছে ভারতও। এমনই ইঙ্গিত দিলেন ভারতের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান দিশে কার্তিক। তিনি বলেন, ‘আমার সেরা ফর্মে রয়েছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদি। নিজেদের সেরা পারফরমেন্স অব্যাহত রাখতে পারলে শিরোপা জয় অসম্ভব কিছু না।’
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ১১বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে দশবারই জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। একবার জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের আসরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিলো টাইগাররা। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৩৪ মুখোমুখিতে ২৮টিতে জয় পেয়েছে ভারত। বাংলাদেশের জয় ৫টিতে।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোমিনুল হক।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রাইদু, মনীষ পান্ডিয়া, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, যুজবেন্দ্রা চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ, খলিল আহমেদ, দীপক চাহার ও সিদ্বার্থ কাউল।
সুত্র- বাসস