জিপি নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে ততই জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে মাথায় রেখেই সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে।’
শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে তাঁর নামে দু’টি সেতুর উদ্বোধনকালে একথা বলেন। উদ্বোধনের পরই সেতু দু’টি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যার একটি হচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ এবং অপরটি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর উপজেলায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ওয়াই আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেত’ু।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুরের গঙ্গাচড়া এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে সেতু দু’টির উদ্বোধন করেন। এ সময় সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণ এবং উপকারভোগীরা দু’সেতুর অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
তাঁর সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ নৌকায় ভোট দিলেই কেবল উন্নয়নের দেখা পায় এবং এটা এখন প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শুধু দেশের উন্নতি হয়।’
এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এ সময় রংপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ বাঞ্চারামপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে একদা উত্তরবঙ্গের অবহেলিত থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, এক সময় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকার মত গঙ্গাচড়াও মঙ্গা প্রবণ এলাকা ছিল। কিন্তুু তাঁর সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে আজ আর মঙ্গা নেই এই শব্দটিই যেন হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের শাসনেই দেশ থেকে মঙ্গা চির বিদায় নিয়েছে – বলেন তিনি।
ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই এলাকার জনগণের যখন কাজ থাকে না তখনকার সময়ের জন্য তাঁর সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন মানে পরিবর্তন এনেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন।
‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ সেতু চালুর ফলে লালমনিরহাট জেলার চার উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের কোটি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলার দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাকিনা-মহিপুর এলাকায় দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে (এলজিইডি) ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সেতুর সংযোগ সড়কটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে যুক্ত হয়েছে।
মূল সেতুর সংযোগ সড়কের কাকিনা অংশে তিনটি কালভার্ট ও দু’টি ছোট সেতু রয়েছে। এ ছাড়া ও মূল সেতু ও পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা।
অন্যদিকে, ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেত’ুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার তিতাস নদীর ত্রিমোহনায় নির্মিত দেশের প্রথম ওয়াই আকৃতির সেতু। এটি চালুর ফলে বদলে যাবে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্বাবধানে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি। সেতুটিতে ২৫টি পিলার, ২৪টি দৃষ্টিনন্দন স্প্যান রয়েছে। তিতাস নদীর ওপর এ সেতু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ হিসেবেও কুমিল্লা দিয়ে তা ব্যবহৃত হবে বলে জানায় এলজিইডি।
সুত্র- বাসস