জিপি নিউজঃ বরিশালে এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন গাজী। ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা এবারই তার প্রথম না, তবে তারপরেও কেন্দ্রে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতাই হয়েছে তার।
কারণ মি: হোসেন এবার ভোট দিয়েছেন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-ব্যবহার করে।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “কেন্দ্রে ঢুকে আমার আইডি কার্ড দেখালাম। তারা সেখানে সেটি চেক করলো। এরপর বুথে ঢুকলাম। মেশিনে ভোট দিলাম।”
বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ব্যবহারের মাধ্যমে এই ইভিএম নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়।
সর্বশেষ বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করেছে নির্বাচন কমিশন।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন, যদিও এ সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আঠার সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি ইভিএম নিয়ে কাজ করছে।
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এবারের নির্বাচনে ৪২ হাজার কেন্দ্রের জন্য মোট প্রায় তিন লাখ ইভিএম মেশিন দরকার হতে পারে।
কীভাবে কাজ করে এই ইভিএম?
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলছেন, ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে ইভিএম নিয়ে একটা পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি জানান, ট্র্যাডিশনাল যে ভোটিং সিস্টেম তার সাথে মিল রেখেই ইভিএম ডিজাইন করা হয়েছে। সময় এমনভাবে সেট করা তাতে ভোটের দিন আটটার আগে ভোট দেয়া সম্ভব হবে না এবং এতে যে পুরনো কোনো ভোট দেয়া নেই সেটিও এজেন্ট ও অন্যদের দেখিয়ে দেয়ার সুবিধা আছে।
মি: চৌধুরী বলছেন, ইভিএম অপারেট করার জন্য প্রিজাইডিং বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বায়েমেট্রিক্স নেয়া থাকবে, তাই তারা ছাড়া কেউ অপারেট করতে পারবে না। কোনো কারণে মেশিন নষ্ট হলেও প্রদত্ত ভোট নষ্ট হবে না।
কোনভাবেই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত নয় তাই হ্যাক করা যাবে না, যেই কেন্দ্রের ইভিএম তা দিয়ে সেই কেন্দ্রেই ভোট দেয়া যাবে।
ভোটার যখন ভোট দিতে আসবে তখন স্মার্ট কার্ড বা পরিচয়পত্র নাম্বার বা ফিঙ্গার প্রিন্টার দিয়ে যাচাই করে তাকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
এর কোন একটি দিয়ে যাচাইয়ের পর ভোটারের ছবি প্রজেক্টরে দেখা যাবে যেটা সব প্রার্থীর এজেন্টরাও দেখতে পাবে এবং এরপর ভোট দানের তিনি গোপন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।
এ পর্যন্ত প্রক্রিয়াকে কন্ট্রোল ইউনিট বলছেন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী।
ভোট দানের প্রক্রিয়া
বৈধ ভোটার সনাক্ত হওয়ার পর ভোটার গোপন কক্ষে যাবেন যেটি ব্যালট ইউনিট হিসেবে পরিচিত।
সেখানে ঢুকেই তিনি ব্যালট পেপার দেখতে পাবেন মেশিনে এবং প্রতীকের পাশে থাকা বাটন চাপ দিয়ে ভোট দেবেন।
ভোট দেয়ার পর স্ক্রিনে যাকে ভোট দিয়েছেন সেই প্রার্থীর প্রতীকের ছবি ভেসে উঠবে। এটিই ভোটারের জন্য কনফার্মেশন যে তিনি কোন মার্কায় ভোট দিয়েছেন। ভোটার কনফার্ম করার বাটনে চাপ দিলে একটি শব্দ আসবে যাতে বোঝা যাবে যে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে।
শাহাদত হোসেন বলেন, মেশিনের কার্ডে শুধু ওই কেন্দ্রের ভোটারদের তথ্য থাকবে ফলে অন্য কেউ ভোট দিতে পারবে না।
আবার কেউ কারও ভোট মুছেও দিতে পারবে না। কেউ একাধিকবার বাটন চাপলেও প্রথমে যেখানে ভোট দিবেন সেটিই থাকবে।
আবার মেশিনটিতে ব্যবহারের জন্য স্মার্ট কার্ড থাকবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে, ফলে অন্য কেউ বুথ কক্ষ দখল করলেও কোনো কাজে আসবে না।
অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময় শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কন্ট্রোল ইউনিট থেকে ক্লোজ সুইচ চাপলে ভোট দেয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
কারা বানাবে এই মেশিন ?
শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নানা গবেষণা করছে। এর আগে ইভিএম তৈরিতে সহায়তা করেছে বুয়েটও।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে অনেকদিন ধরেই। বিএমটিএফ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান তাদের মাধ্যমেই এটা সংগ্রহ করা হবে।
সফটওয়্যার ও ডিজাইন বা পার্টস কিছু হয়তো বাইরে থেকে সংগ্রহ করবে কিন্তু সংযোজন করবে হয়তো বিএমটিএফ। তবে নিরাপত্তা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত করবে বিএমটিএফের কারিগরি সহায়তা নিয়ে।
কতগুলো দেশে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকলেও শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলছেন ব্রাজিল ও ভারতসহ অনেকগুলো দেশেই এটির ব্যবহার চলছে।
সুত্র- বিবিসি-