জিপি নিউজঃ মাশরাফি বিন মুর্তজার ছোঁয়ায় পাল্টে গেল বাংলাদেশ! উড়িয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। স্বাগতিকদের ৪৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। এ জয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তারা। এমন জাদুকরী পারফরম্যান্সের পর কে বলবে টেস্ট সিরিজে ভরাডুবি ঘটেছিল ওদের?
২৮০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মন্থর শুরু করেন ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। হাত খুলতে গিয়েই ধরা খান লুইস। দলীয় ২৭ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। এ মারকাটারি ব্যাটসম্যানকে ফেরান বাংলাদেশ কাপ্তান মাশরাফি। দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা শাহ হোপও স্থায়ী হতে পারেননি। তাকে শিকার বানান রুবেল।
তবে একপ্রান্ত আগলে থেকে যান গেইল। ধীরে ধীরে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। রানআউট কাটা পড়েন ক্যারিবীয় দানব। যৌথ প্রচেষ্টায় তাকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক। সেই চাপের মধ্যে আঘাত হানেন মিরাজ। ক্রিজে স্থায়ী হওয়ার আগেই মুশফিকের স্ট্যাম্পিং বানিয়ে ফিরিয়ে দেন জেসন মোহামেদকে।
একে একে টপ অর্ডারের সবাই ফিরে গেলেও শিকড় গেঁড়ে বসে থাকেন শিমরন হেতমায়ার। একাই রানের গতি বাড়িয়ে নিতে থাকেন। তবে তার পথে বাদ সাধেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে সরিয়ে পথের কাঁটা সরান কাটার মাস্টার। সাজঘরে ফেরার আগে ৭৮ বলে ৫ চারে ৫২ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন এ টপঅর্ডার। পরের বলেই রোভম্যান পাওয়েলকে ফিরিয়ে ক্যারিবীয়দের মাজা ভেঙে দেন আবারো স্বরূপে ফেরা মোস্তাফিজ।
পরে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি হোল্ডার বাহিনী। এরপর তাদের নিয়ে রীতিমতো খেলেন মাশরাফি। ম্যাজিক্যাল ফু দিয়ে উড়িয়ে দেন জেসন হোল্ডার ও আন্দ্রে রাসেল, অ্যাশলে নার্সকে। জয় তখন হাতছোঁয়া দূরুত্বে।
তবে শেষ উইকেটে ঝামেলা পাকিয়ে বসেন আলঝারি জোসেফ ও দেবেন্দ্র বিশু। হারলে হারবেন তবে নিজেদের উইকেট সফরকারীদের দেবেন না-যেন এ প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে। দশম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন দুই টেলএন্ডার। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ উইকেট জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
বিশু-জোসেফ উভয়ই ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। তবু পরাজয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। টপঅর্ডারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত রোবটের মতো চেষ্টা করেও দলীয় সংগ্রহটা ২৩১/৯ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন তারা। এতে ৪৮ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে ৯ বছর পর ক্যারিবীয় দ্বীপে জয় পেল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বাংলাদেশের হয়ে একাই ৪ উইকেট দখল করেন মাশরাফি। ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন পুনরায় ছন্দে ফেরা মোস্তাফিজ।
এর আগে গায়নার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট নেন মাশরাফি। তবে শুরুতেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। দলীয় ১ রানে ফেরেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এনামুল হক। পরে সাকিবকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠেন তামিম। এক পর্যায়ে গড়ে তোলেন তীব্র প্রতিরোধ। তাদের ব্যাটে এগোতে থাকে বাংলাদেশও। তারাও এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে।
তবে হঠাৎই ছন্দপতন। ৩ রানের জন্য তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন সাকিব। ৬ চারে ৯৭ রান করে ফেরার আগে তামিমের সঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। দুজনে এনে দেন ২০৭ রান। এর আগে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকের। ২০১০ সালে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬০ রান করেন তারা। সাকিব সেঞ্চুরি না পেলেও শতক হাঁকান তামিম। ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এ পথে বল খেলেন ১৬০টি। ১০ চারের বিপরীতে ছক্কা হাঁকান ৩টি। এটি বাংলাদেশের হয়ে মন্থর সেঞ্চুরির রেকর্ড।
৪৫ ওভারের পর হাতে উইকেট থেকেও রান আসছিল না। ফলে আড়াইশ পার হবে কি না সন্দেহের মেঘ ঘণীভূত হয়। তবে তা দূর করেন মুশফিক। শেষদিকে মাত্র ১১ বলে ৩০ রানের ক্যামিও খেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এতে ৪ উইকেটে ২৭৯ রানের ফাইটিং স্কোর পায় বাংলাদেশ। সেই পথে হয়েছে দলীয় রেকর্ড। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তাদের মাটিতে এটিই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দেবেন্দ্র বিশু নেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট।