জিপি নিউজঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের টেবিলে ৩০০ প্রার্থীর নামের তালিকা আছে বলে একটি গণমাধ্যমে যে তথ্য উল্লেখ করেছে তাতে মৃত ব্যক্তিদের নাম কীভাবে এলো তা জানতে চেয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি দৈনিকে ‘তারেকের টেবিলে বিএনপির ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, প্রতিবেদনটি শুধু হাস্যকরই নয়, এটি সরকারের মিথ্যা প্রপাগান্ডার এক উদ্বেগজনক সংযোজনমাত্র ।
রিজভী আহমেদ বলেন, কয়েক বছর আগে বিএনপির মৃত কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের নামও আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সদ্য প্রয়াত জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহার আলী প্রধান, কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মরহুম খোরশেদ আলম, চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর হায়দার খান, রাজশাহী-৬ আসনের মরহুম আজিজুর রহমান প্রমুখ।
তিনি বলেন, তারেকের টেবিলে ৩০০ প্রার্থীর নামের তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম এলো কিভাবে? এই প্রতিবেদনটি আগাগোড়াই মনগড়া, কাল্পনিক এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার ও তাদের এজেন্সিগুলোর ধারাবাহিক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় আরেকটি সংযোজন। তারেক রহমান প্রতিনিয়তই দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখছেন উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা নিশ্চিত যে, সারা দেশের মানুষ যখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার, তখন জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য আওয়ামী সরকারের নির্দেশে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সদ্য শেষ হওয়া খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নির্লজ্জ ভোট কারচুপি ও ভোট সন্ত্রাসের চিত্র নিয়ে যখন দেশ-বিদেশ থেকে নিন্দা জানানো হচ্ছে, তখন একটি সরকার-ঘনিষ্ঠ পত্রিকার মাধ্যমে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও মনোনীত প্রার্থীদের একটি মিথ্যা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কারাবান্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির তারেক রহমানের নেতৃত্বে ইস্পাতকঠিন ঐক্য বিভ্রান্ত করা এবং নেতাকর্মীদের মনকে নড়বড়ে করার জন্যই সরকার-সমর্থিত ওই পত্রিকার দ্বারা হাস্যকর ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদটি পরিবেশন করিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এমন সংবাদ পরিবেশন করিয়ে দেশবাসী ও বিদেশিদের দেখানো হচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
পত্রিকাটি কোন টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারেকের টেবিলে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকার সন্ধান পেয়েছে? নতুন আবিষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নাম জনসমক্ষে জানালে প্রখ্যাত জ্যেতির্বিজ্ঞানী হাভেলের নামের সঙ্গে পত্রিকাটির প্রতিবেদকদের নাম ও মহাবিজ্ঞানী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রিজভী আরও বলেন, সরকার সব দিক থেকে যে মুহূর্তে ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই বানোয়াট সংবাদটি প্রচার করা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে অভাবনীয় লুটপাট ও বিদেশি ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের বিপুল পরিমাণ গচ্ছিত অর্থের খবর জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়া, কোটাবিরোধী দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণের গণতান্ত্রিক দাবির আন্দোলনে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত গুণ্ডামি হিটলারের গেষ্টাপো বাহিনীকেও লজ্জায় ফেলত।
আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং নির্বাচনে আসবে এটি ধরে নিয়েই সবাইকে এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আপনি কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার জোরে জানতে পারলেন যে, আপনার অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে? আপনি তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে লোহার সিন্দুকে আটকিয়ে রেখেছেন। আর অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে তো আপনি পুলিশের রাইফেলের নলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
এ সময় তিনি ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সমালোচনা করে বলেন, পুলিশও ছাত্রলীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। বৃহস্পতিবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারন শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন ।