জিপি নিউজঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে আগামীকাল সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি আহমেদ ।
রবিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা আগামীকাল ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করা হবে । ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হবে দুপুর ২টায়। এ বিষয়ে আমরা পুলিশকে অবহিত করেছি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনকেও জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, পুলিশ অনুমতি দিলে তাদের আপত্তি নেই।’
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, কারান্তরীন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই তাকে পছন্দমতো ইউনাইটেড হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে রহস্যজনক আচরণ করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারান্তরীন রেখে সরকারপ্রধান নিষ্ঠুর উল্লাসে মেতে উঠেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও সরকারপ্রধানের নির্দেশে তার জামিন আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা না দেওয়ায় সরকারপ্রধানের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত এখন সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘শুধু পাহাড় কেন, দেশের সব জনপদে রক্তপাতের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। তারাই হাজার হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে এবং বেআইনি অস্ত্র মজুদ রাখার অধিকার দিয়েছে দলীয় সন্ত্রাসীদের। আর এসব মজুদকৃত অস্ত্রের পাহারাদার হিসেবে রাখা হয়েছে গাজীপুরের এসপি হারুনুর রশীদের মতো পুলিশ কর্মকর্তাদের।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘পাহাড়ে আওয়ামী লীগের লালিত সন্ত্রাসীরাই রক্তাক্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত। পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে মদদ দিয়ে আওয়ামী লীগ গোটা পাহাড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। বর্তমান আওয়ামী যুগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শাসকদের চোখের ইঙ্গিতে নড়াচড়া করে বলেই দেশব্যাপী রক্তাক্ত সহিংসতার এত ভয়ানক তাণ্ডব। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে শেখ হাসিনার দেশবিরোধী নীতির কারণেই পাহাড়ে রক্ত ঝরছে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী।’
দুই সিটি নির্বাচনের বিষয়ে রিজভী বলেন, দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইসি (নির্বাচন) তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে একদিকে ক্ষমতাসীনদের হাতে অস্ত্র, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন। এই সাঁড়াশি আক্রমণের মধ্যে দুই সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন দিনকে দিন ভয়াল রূপ ধারণ করছে। নির্বাচনকে ভীতিমুক্ত করতে চায় না বলেই ইসি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটি সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ ।
উল্লেখ্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। এরপর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাকে সেখানে রাখা হয়েছে।