জিপি নিউজঃ সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশে দৃঢ়ভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব, তার সবটুকু আমি করব। বিচারকের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সততা। তাঁর জবাবদিহিতার জায়গা হচ্ছে নিজের বিবেক।
রবিবার বেলা ১১টায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, দেশে দৃঢ়ভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব, তার সবটুকু আমি করব।
এ সময় আইনজীবীদের উদ্দেশে নতুন এ প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আশা করব, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মতো যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন ঠিক একইভাবে প্রধান বিচারপতি দায়িত্বপালন করতে গিয়েও তাঁরা তাদের সহযোগিতার হাত আমার দিকে প্রসারিত করবেন। বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, এবং সহযোগিতা একটি সমৃদ্ধ বিচার বিভাগের ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের সমন্বয় নিয়ে বিচারপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল একটি দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রগসর হতে পারে। যেখানে তিনটি অঙ্গের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে, সেখানে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এই তিনটি অঙ্গের কাজের মধ্যে যেন সমন্বয় রক্ষা করা যায়, সেজন্য আমি সব সময় চেষ্টা করব। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট যেন সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংবিধান অনুসারে তার নিজ দায়িত্ব পালন করে সেটিও আমি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।
আদালতের ভাবমূর্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের এমনভাবে আদালতের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে যেন আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিমান ও দুর্বল ধনী-গরিব সবার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মে যে, তাঁরা সবাই সমান এবং আদালতের নিকট হতে শুধু আইন অনুযায়ী তাঁরা ন্যায়বিচার পাবেন। এতে আদালতের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দৃঢ় হবে।
মামলা জটকে বড় সমস্যা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা জট আজ শুধু আদালতের একার সমস্যা নয়। এটি বারের জন্যও অস্বস্তির কারণ। মামলার পাহাড় যত জমতে থাকবে, আদালতের সঙ্গে সঙ্গে বারের প্রতিও তেমনি বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা কমতে থাকবে। এই সমস্যা সমাধানে বারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বিচারে ডিজিটাল প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু এবং ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন এর পথে অগ্রসর হতে হবে। ডিজিটাইজেশনের জন্য যে পরিবর্তন হবে বারকেও সেটা স্বাগত জানাতে হবে এবং তার বিরোধিতা না করে তার সঙ্গে অভ্যস্থ হতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের নিরন্তর সহযোগিতাও একান্তভাবে কাম্য।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দেশে একটা ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা, মামলা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিচার প্রক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো ও কার্যদকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
সংবর্ধনায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।