জিপি নিউজঃ রাজধানীর কমলাপুরে সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট দখল করে বাস কাউন্টার স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। শ্যামলী পরিবহনের ওই কাউন্টারটি এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নজরে এলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতা দাবি করেছেন রেলের জায়গা লিজ নিয়ে তিনি ওই কাউন্টার করেছেন। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পাবলিক টয়লেট দখল করে কাউন্টার স্থাপনের পর লিজের আবেদন করেছেন ওই নেতা।
সরজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে জানা যায়, শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও তার ভাই রাকেশ চন্দ্র ঘোষ কিছু দিন ধরে আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবসা ভাগাভাগি হওয়ার পরে দেশের প্রতিটি স্থানে তারা আলাদা আলাদা কাউন্টার তৈরি করছেন। যেসব জায়গায় একটি কাউন্টার আছে সেসব জায়গায় এখন দুই ভাইয়ের ভিন্ন কাউন্টার হচ্ছে। মতিঝিল থানার ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে পাবলিক টয়লেটকে মেরামত করে শ্যামলীর কাউন্টার তৈরি করা হয়। মতিঝিল ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, জায়গাটি রেলের ছিল। রেলওয়ে আবার সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পাবলিক টয়লেট দিয়েছিল। তবে এখন এই পাবলিক টয়লেটটি মতিঝিল আইডিয়ালের সামনে চলে গেছে। এটা রেলওয়ের জায়গা, তাদেরই আছে। আমি সেটা লিজ আনছি। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী তিনি শ্যামলীর কাউন্টার করার পরে লিজের আবেদন করেছেন। লিজ আনার আগে কিভাবে কাউন্টার তৈরি করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভাই ব্রাদারই’।
শ্যামলী পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার সেলিম জানান, খালেদ ও আলীর তত্ত্বাবধানে কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। শ্যামলীর ব্যানার দিয়ে তারা করেছেন। ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সুলতান মিয়া জানান, অঞ্চল-২ এর জোনাল অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ওনারা বলছেন বিষয়টি তারা দেখছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-২) আবু নঈম জানান, প্রায় সাত বছর ধরে কমলাপুরের পাবলিক টয়লেটটি পরিত্যক্ত ছিল। তাই সিটি করপোরেশন একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়। সেজন্য আমরা পুরাতন এই টয়লেটটির কিছু অংশ ভেঙে মেরামতের কাজ শুরু করি। কাজ বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে কে বা কারা এখানে ইট বালু সিমেন্ট রড দিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। খবর পেয়ে আমি অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেই। তখন কিছু নির্মাণ শ্রমিককে ধরে নিয়ে আসি। পুনরায় যাতে কাজ করতে না পারে সেজন্য কিছুদিন নজরদারিও রাখি। কিন্তু মাঝখানে শুক্র ও শনিবার থাকার কারণে রাতারাতি তারা এটি নির্মাণ করে ফেলে। মেয়র বিদেশ যাওয়ার একদিন আগে খবর পেলাম জায়গাটিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কাউন্টারের লোকের সঙ্গে কথা বললাম। তারা কিছু বলতে চায় না। পরে আমি সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাই। তিনি আরো বলেন, যাদেরকে ধরে নিয়ে যাই অনেক চেষ্টা করে তাদের মুখ থেকে কিছু বের করতে পারিনি। তারা শুধু বলে আমাদেরকে উপর লেভেল থেকে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। তাই আমরা কাজ করছি। বিষয়টা সমাধানের জন্য আমি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মেয়রের কাছে ফাইল নিয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তী উচ্ছেদের জন্য অনুমতি নেয়ার জন্য। অনুমতি নিয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাবো। দখলে রাখা শ্যামলী কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তিনি বলেন, যেহেতু তারা দখলে আছে তাই তাদের দায়ী করছি। এছাড়াও মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি জায়গাটি লিজ নেয়ার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে বলে আমরা জেনেছি। আবার একই ব্যক্তি ব্যবসা করার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে লাইসেন্সের আবেদন করেছে। এর পেছনে দুষ্ট একটি চক্র কাজ করছে। দখলে নেয়ার পরেই এই দুই আবেদন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত আছি। আমাদের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযানে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই আমরা এখন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ করবো। কারণ পাবলিক টয়লেটটি যেহেতু আমাদের সেহেতু আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবো।
সুত্র- মানবজমিন অনলাইন ডেস্ক,