জিপি নিউজঃ বাংলাদেশে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন সহিংস হয়ে ওঠার ইতিহাস নতুন কিছু নয়। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের আগেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট এবং প্রতিহত করতে বিএনপির আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা হয়।
বিএনপি বিহীন বিতর্কিত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে গঠিত সরকারের শেষ বছরে এসে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনী এ বছরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনার বক্তব্যে, “কোনো কোনো মহল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। আপনাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণ অশান্তি চান না। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবেন- এটা আর এ দেশের জনগণ মনে নিবেন না।”
বিএনপি মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত নেই। নেতারাও বলে আসছেন আরেকটি ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন তারা হতে দেবেন না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “এই সহিংসতা বা আগুন সন্ত্রাস বা অন্য ঘটনাগুলো যেগুলো বলা হয়, সেগুলোকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে আনতে হবে। রাজনীতিকে আজকে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবাহিত করতে হবে। এবং সেটা করার জন্য বিএনপি একক নয় তার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যে জাতীয় ঐক্যে সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে।”
এদিকে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে পরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ভাঙচুরকে ক্ষমতাসীন দল প্রতিনিয়ত বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
এখন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা কোনো সংকট সৃষ্টি না হলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো প্রয়োজন মনে করছেন না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক সংকট হতেই পারে কিন্তু সেটি মোকাবেলায় তারা রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন।
“আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তারা সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং তাদের সক্ষমতাও অনেক বেশি এখন। তার সাথে আমরা বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা রাজনৈতিকভাবেই এগুলো মোকাবেলা করবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা যতই হুমকি দিক তারা কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে না। দেশে নির্বাচন অবশ্যই হবে”।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন যে কোনো সংকট এড়াতে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকেই ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন এখনো সময় আছে এবং সংঘাত এড়াতে এখন সরকারের দায়িত্বই বেশি।
“২০১৪ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের খুবই তিক্ত। এতগুলি মানুষ প্রাণ হারালো। একটা বাসের মধ্যে ২৯ জন মানুষ মারা গেল। কত মানুষের প্রাণ নষ্ট হলো। এটা কি আসলে উচিৎ? একটা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থান আমাদের দরকার।”
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নির্বাচনী বছরে অরাজকতার আশঙ্কা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের ওপরই বর্তায়। সুতরাং সেই সরকারের প্রধান হিসেবে উনি (প্রধানমন্ত্রী) চিন্তা করতে পারেন যে, এই অরাজকতা ঠেকাতে আমার সরকারের কী করা উচিৎ? এবং একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর একটা চেষ্টা উনি করতে পারেন বলে আমি মনে করি। সেটা দেশের জন্য উপকার হবে।”
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ বলছে জ্বালাও পোড়াও হলে জনগণ মানবে না আর বিএনপিও বলছে জনগণ বিতর্কিত নির্বাচন মানবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই চাননা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কোনো সংঘাত বা সহিংসতা হোক।
সুত্র- বিবিসি