জিপি নিউজঃ রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে ভারত উভয় সংকটে পড়েছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে। পত্রিকাটি বলছে, রোহিঙ্গারা বাঙালি মুসলিম বলে মিয়ানমার সরকার যে দাবি করে থাকে, তা মেনে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যদিকে মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সুচি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের দুই নেত্রীর মধ্যে কাকে কতটা সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে এখন প্রবল দোটানায় ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক চূড়ান্তপত্র দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার।
ঢাকার তরফে মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পশ্চিম মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা না হলে ঢাকা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের দাবি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর নজরদারি চালাতে গিয়ে সীমান্তে বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন করেছে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ড্রোন। সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে মিয়ানমার।
ডোকলাম বিতর্ক মেটার পর ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে মিয়ানমারে যান তিনি। রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সংযোগ বাড়ছে বলেও দাবি করছে ভারত। ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রুখতে বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি সরকার সেই নির্দেশ মানতে রাজি নয়। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর কাজ (পুশব্যাক) শুরু হয়েছে। এমনকী জম্মু-কাশ্মিরে থাকা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মোদি সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে সংঘ পরিবারও। শনিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা সুরেন্দ্র জৈন বলেন, রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে যোগের জন্য তাদের ভারতে রাখা নিরাপদ নয়। সম্প্রতি কাশ্মিরে নিহত এক জঙ্গির পরিচয় নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সে আসলে রোহিঙ্গা।
আনন্দবাজার লিখেছে, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও ভারতের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রককে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে।
বস্তুত মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আলাদা পরিচয়ও মানতে রাজি নয়। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা বাঙালি মুসলিম। এ যুক্তি মেনে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু জাতিসংঘ তা মানছে না। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারেই আশ্রয় দিতে হবে। তাদের আলাদা জাতি পরিচয়ও মানতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। ফলে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল বলেই মনে করছেন দিল্লি¬র কর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে চীনা প্রভাব ঠেকানোর জন্য সুচি সরকারের কাছাকাছি আসতে চাইছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক দ্রুত বাড়ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বাংলাদেশকে চীনের হাতে ঠেলে দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। ফলে ভারত এখন উভয় সংকটে।