জিপি নিউজঃ বন্দরের সমস্যা দ্রুত সমাধান করুন। দু-একজন খারাপ ব্যবসায়ীর জন্য সবাইকে বাধা দেয়া হবে, তা মেনে নেয়া হবে না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কোনো ব্যবসা নেই। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। এভাবে দেশ এগিয়ে নেয়া যাবে না।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দর ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি আইসিডিগুলো কাজ করছে না। এগুলোর লাইসেন্স বাতিল করতে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে। তিনি বলেন, পণ্য লোড ও আনলোড করতে জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয়, এটি লজ্জার বিষয়। এটি জাতীয় লোকসান এবং ব্যয়ও বাড়ে। পাশাপাশি রফতানি পণ্য নিয়ে যাওয়া পরিবহনও বসে থাকে তিন-চার দিন। বন্দরে পণ্য দিয়ে যাওয়া পরিবহনের স্থান আরও সম্প্রসারণ হওয়া উচিত। যাতে পণ্য দ্রুত নামিয়ে চলে আসতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা। ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখাও খোলা রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বন্দর এখন ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন খোলা থাকছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি স্ক্যানিং মেশিন প্রয়োজন আছে। এটি পাওয়া যাবে। এটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে। বন্দরের আরো সমস্যা হচ্ছে বিল অব এন্ট্রি থেকেও সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কেন এটি দু’-তিন দিনের মধ্যে হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী নিজেই।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বন্দরের কাজে দরকার ‘দ্রুত অ্যাকশন’। এটি হলে সময় নষ্ট হয় না, চার্জ বাড়ে না, ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ বাড়ে না। কারণ বাংলাদেশ ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’র ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থায় আছে।
মন্ত্রী বলেন, আপেলসহ খাদ্যপণ্যেও কনটেইনার বসিয়ে রাখলে বিদ্যুতের চার্জ গুনতে হয় ব্যবসায়ীকে। কিন্তু এখন থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের চার্জ দেবে। এটি ব্যবসায়ীরা দেবেন না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি আইসিডিগুলো বাতিল করা দরকার। বর্তমানে ১৮টি আইসিডি রয়েছে। সব কটির লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। এরা কিছুই করছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে না।
তিনি বলেন, ভালো ব্যবসায়ীদের জন্য গ্রিন চ্যানেল ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসটিআইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে মূল কথা হচ্ছে, যে কোনো ব্যাপারে দ্রুত কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠকে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সময়মতো আমদানিকৃত মালামাল বন্দর থেকে হাতে পাচ্ছি না। ফলে নির্ধারিত সময়ে রফতানি করা যাচ্ছে না। বন্দরে পণ্য ৩-৪ দিন পড়ে থাকে। এসব কারণে পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি বিগত দশ বছরে ১৩ শতাংশ থেকে কমে দশমিক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
দু-একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করার কারণে হয়রানি করা হচ্ছে ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ীকে। অপরাধ করলে শাস্তি দিন। এতে কোনোদিন আপত্তি করিনি। কিন্তু ভালো ব্যবসায়ীদের বাধা দেবেন, তা হতে পারে না।
তিনি বলেন, পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরে ২৮ বিলিয়নের বেশি হয়নি। বন্দরের অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে না।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি নেই। ব্যবসা করতে পারছি না। অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের কারণে গত দু’বছরে ১২শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশি বায়াররা বন্দরের অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপত্তি জানাচ্ছেন।
একটি স্ক্যানিং মেশিন আনা হয়েছে ৭ দিন আগে। টেকনিশিয়ানের কারণে আরো এক মাস সময় লাগবে স্থাপন করতে। এভাবে ফাইল ওপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে ওপরে যাওয়া-আসার কারণে ব্যবসায়ীরা নিচের দিকে চলে যাচ্ছেন। অকশনে না দিয়ে কনটেনার দু’বছর বন্দরে ফেলে রাখা হচ্ছে। কেন এভাবে ফেলে রেখে জট তৈরি করা হচ্ছে। ৪৫ দিনের মধ্যে তা অকশনে দেয়ার আইন রয়েছে। আমরা বেআইনিভাবে চললে শাস্তি দিন। বেআইনিভাবে চললে আপনাদেরও (বন্দর কর্তৃপক্ষ) শাস্তি হওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বন্দরে ৫০ হাজার অতিরিক্ত কনটেইনারের স্থান করা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা ব্যাংক খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পণ্যের ১৫-১৬ শতাংশ কায়িক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি আরও কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন কনটেইনার ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে দেয়া হয়েছিল ১ মিলিয়ন কনটেইনার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ লাখ কনটেইনার রফতানি করা হয়। যার আর্থিক মূল্য ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তবে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়ানো দরকার। একইভাবে বেনাপোল বন্দরের সমস্যাও তুলে ধরা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।