জিপি নিউজঃ ইউরোপে বহু দেশে যখন করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন অবস্থা চলছে তখন একটি দেশ অন্য সবাইকে অনুসরণ না করে এমন এক পন্থা নিয়েছে যব স্বাভাবিক জীবনের অনেক কাছাকাছি।
যদিও সুইডেনে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে এবং মারা গেছেন ১০৫ জন।
তা সত্ত্বেও দীর্ঘ শীতের পর সুইডেনের রাজধানীতে যখন ‘বাইরে বসে থাকার মতো’ গরম পড়েছে – তখন লোকে তার সর্বোত্তম ব্যয়ভার করতে দ্বিধা করছে না।
মারিয়াটরেট স্কয়ারে দেখা যাচ্ছে ভাইকিং দেবতা থরের বিশাল মূর্তির সামনে গোটা পরিবার বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। ফুটপাতের কিনারায় বসে আছে তরুণ যুগলরা।
এ সপ্তাহে শহরের নাইটক্লাবগুলোও খোলা ছিল। তবে রোববার থেকে ৫০ জনের বেশি লোক জড় হওয়া নিষিদ্ধ হচ্ছে।
অবশ্য এটা বলতেই হবে – শহরগুলো কেমন যেন একটু ঠাণ্ডা – হৈচৈ-ব্যস্ততা কম।
শহরের গণপরিবহন কোম্পানি এসএল বলছে, ট্রেন আর সাবওয়েতে লোকজন কমে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। শহরের প্রায় অর্ধেক লোক ঘরে বসে কাজ করছে।
সুইডেনের কর্মক্ষম জনশক্তি প্রযুক্তির ব্যয়ভার এবং বাড়িতে বসে রিমোট-ওয়ার্কিং করতে অভ্যস্ত।
ব্যবসা-সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এসবিআর-এর প্রধান নির্বাহী স্টাফান ইংভারসন বলছেন, “যে কোম্পানিরই এটা করার ক্ষমতা আছে, তারা এটা করছে, এবং তাতে কাজও হচ্ছে।”
আসলে এটাই হচ্ছে সুইডেনের সরকারি স্ট্রাটেজির মূল কথা – নিজের দায়িত্ববোধ।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আশা করছে – কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ না করেও এভাবেই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যাবে। কঠোর নিয়ম-কানুন না করে এখানে দেয়া হচ্ছে নির্দেশিকা – অসুস্থ বা বয়স্ক হলে ঘরে থাকা, হাত ধোয়া, অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করা, বাড়িতে বসে কাজ করা।
প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন এক টিভি ভাষণে বলেছেন, “বড়দের বড়র মত আচরণ করতে হবে, আতংক সৃষ্টি করবেন না, গুজব ছড়াবেন না। এ সংকটে কেউ একা নয়, সবারই বড় দায়িত্ব আছে।”
কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা
সুইডেনে সরকারি কর্তৃপক্ষের ওপর মানুষের আস্থা অনেক উচ্চ। ফলে তারা নিজে থেকেই নির্দেশাবলী মেনে চলে।
জনসংখ্যার একটি বৈশিষ্ট্যও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশগুলোয় একটি বাড়িতে কয়েক প্রজন্মের লোক বাস করেন। কিন্তু সুইডিশ বাড়ির অর্ধেকেই লোক থাকেন মাত্র একজন।
এর ফলে পুরো পরিবারে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক কম।
তা ছাড়া সুইডিশরা বাড়ির বাইরের জীবন ভালোবাসে এবং লোকের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখাটাকে কর্মকর্তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
স্টকহোম চেম্বারের প্রধান নির্বাহী আন্দ্রেয়াস হাটজিগিওর্গিওর মতে সুইডিশ এই পন্থা অন্য দেশের চাইতে যুক্তিসম্মত।
ইতিহাস বিচার করবে
তবে এই ‘সুইডিশ এপ্রোচের’ অনেকে সমালোচনাও করছেন।
সুইডেনের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের একজন এপিডেমোলজিস্ট এমা ফ্রানজ বলছেন, সরকারের এসব নির্দেশনা যথেষ্ট নয়। তিনি চাইছেন দোকানপাট বা জিমে লোকজন কীভাবে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করবে তার ব্যাপারে আরও স্পষ্ট নীতি নেয়া দরকার।
করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে বিভিন্ন ব্যবসা সংকটে পড়েছে।
ফলে অনেকে বলছেন, সুইডেনকে কৌশল পরিবর্তন করতে হবে, অন্য ইউরোপীয় দেশের মতই লকডাউন আরোপ করতে হবে।
এমা ফ্রানজ বলছেন, “ইউরোপের রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীরা সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন কীনা তা ইতিহাসই বিচার করবে। কোন পদক্ষেপ যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে তা কেউই জানে না।”
সুত্র- বিবিসি