জিপি নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজ চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।
সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা চূড়ান্ত প্রার্থীদের আজ প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবেন বলে ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান আজ বাসসকে জানান।
তিনি জানান, প্রচারের সময় আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোটের মাঠে রয়েছে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি (ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি)। এসব কমিটির কাছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনী অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার কাজ শুরু করতে হবে। আর এটা বন্ধ করতে হবে ভোটগ্রহণ শুরু ৩২ ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত। সে হিসেবে এবার প্রার্থীরা ১৯ দিন প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন।
নির্বাচনী পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার কোনভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। পোস্টার রঙ্গিন করা যাবে না। পোস্টারে প্রার্থী ছাড়া দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে। যা দড়িতে ঝুঁলিয়ে প্রচার করতে হবে। ৪’শ বর্গফুট এলাকার বেশি বড় কোন প্যান্ডেল করে প্রচার চালানো যাবে না। কাপড়ের তৈরি ব্যানার করে প্রচার চালানো গেলেও ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা যাবে না। জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়, এমন কোন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে হবে। প্রচারের অংশ হিসেবে যে কোন প্রকার দেয়াল লিখন ও পোস্টার সাঁটানো দন্ডনীয় অপরাধ।
মাইকে প্রচার চালানো যাবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। পাশাপাশি একই নির্বাচনী এলাকাতে কোন অবস্থাতেই তিনটির বেশি লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী এলাকায় প্রতি ইউনিয়ন আর পৌর এলাকার ওয়ার্ড প্রতি একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না।
মোটর সাইকেলসহ যে কোন মোটরগাড়িতে করে মিছিল, মশাল মিছিল বা শোভাযাত্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোন প্রকার বিদ্যুতিক আলোকসজ্জা করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
প্রচারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অন্য কোন প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনা ব্যক্তি সম্মানহানীকর কিছু করতে পারবে না। উস্কানীমূলক কোন বক্তব্যও দেয়া যাবে না।
প্রচারণায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সব সুবিধা ত্যাগ করে প্রচার কাজে অংশ নিতে হবে। কোন ডাক বাংলো, সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ প্রটোকল ছেড়ে এলাকায় যেতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ আইনে অনুমতি থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রটোকল পাবেন। দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে না।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনা (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। পরে ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৬৭ জন ও বাকি ৪৯৮ জন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গত ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেন ৫৪৩ জন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৪৩ জন। এ ছাড়া রোববার উচ্চ আদালতে রিট করে আরও কয়েকজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার রায় পেয়েছেন।
রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিনে বিকেল ৫টার মধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় ও জোটের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা স্ব-স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই তালিকার অনুলিপি কমিশনকে দিতে বলা হয়। তাদেরকে দেয়া চিঠিতে দলের প্রধান বা মহাসচিব বা সমমর্যাদার ব্যক্তির স্বাক্ষরে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিতে বলা হয়। চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ছাড়া ওই দলের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। রোববার চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা দেয়ার পর বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। আজ সোমবার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক দেবেন।
সুত্র- বাসস