জিপি নিউজঃ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দলটির অন্যান্য নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল সরকারের দানবীয় আচরণ এবং এটি তাদের নিখুত মাস্টারপ্লানের অংশ।
রবিবার দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকার জন্যই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত আছে। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) হয় অন্ধ না হয় কানা।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার সরকারের পক্ষে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া সবকিছুর উপরই সরকার যেন সিন্দাবাদের জ্বীনের মতো সওয়ার হয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে মনোনয়ন পত্রের দু’পাশ থেকে ধরে আছেন পুলিশের দুজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। অথচ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন উদাস কবির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিলো না।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ যেন আরো অবনতিশীল হয়েছে। নৌকার পক্ষে হালে পানি না পাওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের শুধু মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করেই সরকারের সাধ মিটছে না এখন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘু ঘু চরিয়ে দিতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সারাদেশে প্রার্থীসহ বেছে বেছে বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। প্রার্থীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আর এসব কিছু নেপথ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে দুটি শক্তিশালী কেন্দ্র- একটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যটি গণভবন, নির্বাচন কমিশন হুকুম-বরদার মাত্র। কমিশন শুধু ওই দুই কেন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, দেশে বিরোধী দলশূন্য নির্বাচনী মাঠ তৈরি করতেই এসব ঘৃণ্য অপকর্ম সাধন করা হচ্ছে। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, গুম করছে, গ্রেফতারের পর অস্বীকার করছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিলাভের পরও জেলগেট থেকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে তাতে সারাদেশে এক রক্ত-শীতল করা আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজমান হয়েছে। জনগণকে ভোট থেকে দূরে রাখার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারী দলের অনাচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ঘটনা থেকেই মনে হয়-তারা ভোটারদের ভীতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সময় এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে নৌকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর গাজীপুরের ওসি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পোশাক পরে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে কারো জানা নেই। অথচ সময়ের অজুহাত তুলে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়নি। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীর পক্ষে রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাকে পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। অথচ কিছু রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের পক্ষপাতযুক্ত বে আইনী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এই পক্ষপাতের ধারা ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সুতরাং কমিশন নিজেরাই নিজেদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।