জিপি নিউজঃ একে একে ৪২টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটার বিহীন কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে কথিত সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথিত বিশেষ দুত সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ। একমাত্র মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় তিনি আটকে আছেন। এই মামলার গতিপ্রকৃতি আর তার রাজনৈতিক ‘নড়াচড়া’র সঙ্গে একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এরশাদ নিজেও মামলার কারণে চাপে থাকার কথা মাঝেমধ্যেই বলেন। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখনো আমার নামে মামলা আছে। একটা দিনের জন্যও মুক্ত ছিলাম না, এখনো নেই। আমার মতো দুঃখী রাজনীতিবিদ আর কেউ নেই।’
এরশাদের এই বক্তব্যের দুদিন আগে ১৮ নভেম্বর মঞ্জুর হত্যা মামলায় এরশাদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১৭ জানুয়ারি ধার্য করেন আদালত।
জাতীয় পার্টির নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা মামলাটিকে এরশাদের বিরুদ্ধে ‘গুটি’ হিসেবে ব্যবহার করে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। চার বছরেও সেই তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম জানান, এর জবাব রাষ্ট্রপক্ষ ও তদন্ত কর্মকর্তা দিতে পারবেন। বিলম্বের কারণ রাজনৈতিক কি না, সে বিষয়ে সরাসরি জবাব দেননি তিনি।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালে দায়ের হওয়া মঞ্জুর হত্যা মামলা দেড় যুগের মাথায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি গতি পায়। তখন মহাজোটের শরিক হয়েও সরকারের কঠোর সমালোচনায় লিপ্ত এরশাদ। ওই বছরের ১১ নভেম্বর এরশাদ বলেছিলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ তাঁকে থুতু দেবে। এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো।’ তত দিনে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক হয় ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। এক সপ্তাহের মাথায় ১৮ নভেম্বর এরশাদ সুর পাল্টে বলেন, ‘নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে।’ নির্বাচনের তারিখ ছিল ৫ জানুয়ারি। ৩ ডিসেম্বর এরশাদ আবার নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিলে তাঁর ঠিকানা হয় হাসপাতাল। কিন্তু নির্বাচনের পর বিশেষ দূত পদে নিয়োগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার বদলে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত এখনো চলছে।
রায় ঘোষণার তারিখ দেওয়ার পর আবার অধিকতর তদন্তের কী যুক্তি থাকতে পারে, জানতে চাইলে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘হত্যার আগে মঞ্জুরকে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়েছিল। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁদের সাক্ষী করা প্রয়োজন ছিল।’ দুজনের সাক্ষী নিতে চার বছর কেটে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সিআইডির কর্মকর্তা বিদেশে গিয়ে তাঁদের সাক্ষ্য নিয়ে এসেছেন। মামলায় ২৫ জন বিচারক বদল হওয়ার তথ্য সম্পর্কে এই কৌঁসুলি বলেন, সঠিক সংখ্যাটি গুনে বলতে হবে। দু-একজন কমবেশি হতে পারে। এরশাদের বিরুদ্ধে মামলার এই দীর্ঘসূত্রতা রাজনৈতিক কি না-জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়।’
এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। তাই প্রতিটিতে তাঁর মক্কেল বিজয়ী হয়েছেন। তবে মঞ্জুর হত্যা মামলা ২৩ বছর আটকে থাকার কারণ রাজনৈতিক কি না, এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে চাননি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। ২ জুন চট্টগ্রামে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশি হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালে মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এরপর ২৩ বছর পার হয়েছে।
এবারের নির্বাচনেও এরশাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে থাকছেন। এখন আসন নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এরশাদ মাঝেমধ্যে বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। কিন্তু মামলার তারিখ পড়লে তিনি ভোল পাল্টে ফেলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম মনে করেন, দেড় দশক একসঙ্গে থাকলেও আওয়ামী লীগ এরশাদকে বিশ্বাস করে না, এরশাদও আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না। তাঁর মতে, এখনই যদি এরশাদের মাথার ওপর থেকে মামলার খড়্গ নেমে যায়, তাহলে তাঁকে ধরে রাখতে পারবে না আওয়ামী লীগ।
চেষ্টা করেও বিএনপি এই স্বৈরাচারকে জোটে নিতে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, দলটির শাসনামলে (১৯৯১-১৯৯৫) প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে থাকার কথা ভুলতে পারেননি এরশাদ। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এরশাদ সব মামলায় জামিন পান। সুযোগ পান জাতীয় সংসদে বসার। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপিও এরশাদকে কাছে টেনেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদিও ধরে রাখতে পারেনি। ২০০৫ সালে জাতীয় পার্টি নিয়ে এরশাদ খালেদা জিয়ার জোটে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালের এক-এগারোর কিছু আগে এই জোটের সমীকরণ পাল্টে যায়। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চাপে রেখে ও সুবিধা দিয়ে এরশাদকে হাতের মুঠোয় বন্দী করে রেখেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নীতি-আদর্শের চেয়ে ক্ষমতায় থাকাটাই বড় কথা। আর এই ক্ষমতার জন্য এমন অনৈতিক ও আদর্শহীন সমঝোতা। তাঁর মতে, এরশাদ-কাণ্ডে দেশের বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হয়। একইভাবে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির রাজনীতি ওই দলটির দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে।
কেউ কথা রাখেনি
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তিন জোটের রূপরেখা ও ৯ দফা আচরণবিধির লক্ষ্য ছিল স্বৈরাচার উৎখাত করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রশ্রয় না দেওয়া, স্বৈরাচারকে কারও সঙ্গে না নেওয়া, সংকট সৃষ্টি হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান ইত্যাদি।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেন, ‘যে স্বৈরাচার আমার ছেলেকে হত্যা করল, শাসনব্যবস্থায় সে আবার পুনর্বাসিত হয়েছে। সংসদে তাকে সরকার ও বিরোধী দলে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। যারা স্বৈরশাসককে পুনর্বাসন করল, শহীদদের আত্মা তাদের ক্ষমা করবে না। শহীদের মা হিসেবে আমিও কখনো ক্ষমা করব না।’
বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল এবং ওয়ার্কার্স পার্টি-জাসদের নেতৃত্বে পাঁচটি বাম দল ১৯৯০ সালের ২১ নভেম্বর যৌথভাবে যে রূপরেখা ঘোষণা করেছিল, তার আলোকে এরশাদের পতন হলেও আর কোনো লক্ষ্যই এখন পর্যন্ত সেই অর্থে পূরণ হয়নি। কেউ এই রূপরেখার বাস্তবায়ন চায়নি।
নব্বইয়ের ছাত্রনেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, পতিত স্বৈরাচারকে নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার ন্যক্কারজনক চেষ্টা, আর বড় দুটি দল ঘিরে সাম্প্রদায়িক শক্তির অবস্থান ও আস্ফালন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল।
ক্ষমতার সঙ্গেই আছেন
ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলেও এরশাদ ক্ষমতার সঙ্গেই আছেন। সাবেক এই স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন ১৫ বছর। ১৯৯৬ সালে ঐকমত্যের সরকারে এবং ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে অনেক কিছুই পেয়েছেন এরশাদ। ব্যাংক পেয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য পেয়েছেন। মন্ত্রী-সাংসদ পেয়েছেন। সরকারের একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অর্থবিত্ত ছাড়াও তাঁর সবচেয়ে বড় পাওয়া ৯ বছর এত সব খুন, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ করেও জেলখানার বাইরে থাকা।
ডা. মিলন, নূর হোসেনসহ এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে অসংখ্য ছাত্র-জনতা হতাহত হন। এর মধ্যে নিহত ৫৭ জনের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন বিষয়ে গবেষক ড. মোহাম্মদ হাননান। তাঁর সম্পাদিত বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস (১৯৭২ থেকে ২০০০) গ্রন্থে তাঁদের নাম-পরিচয় (পৃষ্ঠা ৬৭১-৬৭৪) পাওয়া যায়।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার কেন্দ্রের প্রকাশিত পুস্তিকায় ৫০ পৃষ্ঠায় এরশাদের অর্থনৈতিক কীর্তিকলাপের আংশিক চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা, বিভিন্ন প্রকল্প, পণ্য আমদানি, জাহাজ, বিমান, রাডার কেনাসহ ১৭টি খাতের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, এরশাদ ও তাঁর দোসরেরা এসব ক্রয়বাবদ ৪১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করা হয় বিশ্বের ‘রিচেস্ট প্রেসিডেন্ট অব দ্য পুওরেস্ট কান্ট্রি’ (সবচেয়ে গরিব দেশের সবচেয়ে ধনী প্রেসিডেন্ট)।
ব্যক্তিগত জীবনেও নানা কেলেঙ্কারির জন্য সমালোচিত হয়েছেন এরশাদ। বহুজনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এরশাদের এমন সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই শিল্পী কামরুল হাসান তাঁর মৃত্যুর আগে এরশাদকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন।
শেষ ইচ্ছাও ক্ষমতা
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ বলেছিলেন, এটাই তাঁর জীবনের শেষ নির্বাচন। আবার গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তৃণমূল নেতাদের কাছে মৃত্যুর আগে ক্ষমতায় যাওয়ার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে এরশাদের মৃত্যু নিয়ে এক দফা আলোচনা হয় ঢাকায় জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের সবার কাছ থেকে আয়ু নিয়ে নেতার বয়স বাড়িয়ে দাও।’ (জুন ১৩,২০১২ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালে, বয়স এখন ৮৮। ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার সময় বয়স ছিল ৬০। গত ২৮ বছর ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সব চেষ্টাই করে চলছেন তিনি।
এরশাদ-ঘুড়ির লাটাই অন্যের হাতে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এরশাদ-ঘুড়ি আকাশে উড়লেও লাটাই অন্যের হাতে। রওশনের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে, জাতীয় পার্টির ভেতরের বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব আসে তাঁর ওপর। জাপার মন্ত্রী-সাংসদ হয় ওনার পছন্দেই। কথা না শুনলে এরশাদকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, আবার বিশেষ দূত করে দেওয়া হয় সুযোগ-সুবিধা।
তবে সরকারের ভূমিকায় এরশাদ মাঝেমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগকে তিনবার ক্ষমতায় আনার খোঁটা দিয়েছেন। এরশাদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি। বিনিময়ে তারা (আওয়ামী লীগ) আমার দল ভাঙে। (যুগান্তর, ২ জানুয়ারি ২০১৮)
গত বুধবার তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, চেয়ারম্যান অসুস্থ। কিন্তু আগের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রাজনীতির আলোচনা অন্য রকম।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, ২০১৪ সালের মতো এরশাদ আওয়ামী লীগের কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসায় এরশাদ রাজনীতিতে বা ক্ষমতাসীনদের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের চিন্তায় এখন কিছু আসন দিয়ে এরশাদকে হাতে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার রাজনীতির কারণে এই কদরটুকু থাকলেও তাঁর পায়ের নিচ থেকে রাজনীতির মাটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে।
অস্তিত্বের ঝুঁকিতে জাপা
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জাপা একই সঙ্গে বিরোধী দল ও সরকারে ছিল। মন্ত্রিসভায় জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, আর তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী। এই প্রেক্ষাপটে এরশাদ ও রওশন এরশাদ বারবার জাপার পরিচয় সংকটে ভোগার কথা বলেছেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রওশন এরশাদ প্রশ্ন করেন, ‘আমরা সরকারি দল, না বিরোধী দল-কোনটা আমরা?’
রওশনের এই অসহায়ত্বের প্রতিধ্বনি বিভিন্ন সময় এরশাদের কথায়ও প্রকাশ পায়। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছেন, ‘আমরা আর গৃহপালিত বিরোধী দল হতে চাই না। নেতা-কর্মীদের শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে প্রস্তুত।’
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, অন্যের আলোয় আলোকিত হওয়ায় জাপার রাজনীতি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে এবং পরিচয় সংকটের কারণে দলটির সমর্থন কমছে। এবারের নির্বাচনে এটা স্পষ্ট হবে। সুত্র: প্রথম আলো।