জিপি নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মর্যাদা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ এর সংস্কারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই বাহিনীতে সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠানোর দিক থেকে অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা একটি বৈশ্বিক জনকল্যাণমুখী সেবা। এই বাহিনীর মর্যাদা ধরে রাখতে আমাদের সকলকে অবশ্যই একটি ইতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। এটা অনেকের জীবনের আশার আলো জ্বালিয়েছে। আমাদের অবশ্যই এই আশার আলোকে সম্মান জানাতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই বাহিনীতে সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠানোর দিক থেকে অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উদ্যোগে অ্যাকশন ফর পিসকিপিং (এফোরপি) এর ওপর একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের এখন নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হচ্ছে। ওই সব স্থানে শান্তি বজায় রাখার মতো পরিস্থিতি নেই। রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে তারা ক্রমবর্ধমান হুমকির শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মিশনগুলো প্রায়ই বিভিন্ন মান ও ধরনের বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে থাকে। আর এটা জাতিসংঘ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানগুলোকে আরো জটিল ও বিপজ্জনক করে তুলছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এজন্য শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া উচিত। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের মতো ক্ষমতা ও সরাঞ্জামাদি তাদের দেয়া উচিত।’
শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোন রাষ্ট্রের সদস্যদের মোতায়েনের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং সেই অনুযায়ী কতটা নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে তা বিবেচনা করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবশ্যই উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমরা আশা করছি এ ফোর পি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে তাদের ‘লক্ষ্য পূরণে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে’ সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দি ডিক্লিয়ারেশন অব শেয়ার্ড পিসকিপিং কমিটমেন্টস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল বয়ে এনেছে।
তিনি বলেন, এতে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত দায়িত্বশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে রাজনৈতিক অগ্রগণ্যতাকে পুনঃনিশ্চিত করেছে।
জীবন রক্ষার জন্যই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বিনিয়োগ একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যয় ও শান্তিরক্ষী কমালে মাঠ পর্যায়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন,এতে ফ্রন্টলাইনে যারা আছেন তাদের কথা অবশ্যই শুনতে হবে। শান্তিরক্ষা মিশনে যে সব দেশের সেনা ও পুলিশ অবদান রাখছে নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘ সচিবালয়কে তাদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,ঘোষণায় অর্থবহ অগ্রগতির পাশাপাশি অঙ্গীকারের মূল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ এতে শরিক হতে প্রস্তুত রয়েছে।
শান্তিরক্ষাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,“শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিতে আমরা কখনো পিছপা হইনি। চলতি বছর আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ৩০ বছরের অবদান উদযাপন করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশী অনেক শান্তিরক্ষী দায়িত্বরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। এখনো এই দায়িত্ব পালনে আমরা কুণ্ঠিত নই। এখন আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে কম সময়ে আমাদের শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা তাদের ভালো এবং অগ্রসর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তারা যে কোন পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা জনগণের হৃদয় ও মন জয়ের লক্ষ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা নিজেদের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা নিজস¦ সম্পদে মালীতে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সুরক্ষিত যানবাহন সরবরাহ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা এই নীতি অন্যান্য মিশনেও অনুসরণ করবো।
শেখ হাসিনা বলেন,তিনি ব্যক্তিগত আগ্রহে নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন। “আমরা প্রথমে আমাদের নারী হেলিকপ্টার পাইলটদের কঙ্গোতে মোতায়েন করেছি, এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক।
তিনি বলেন, আমরা সদরদপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ে আরো সিনিয়র নেতৃত্ব নিয়োগ দিতে পারলে বাংলাদেশ খুশি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যৌন অপরাধ ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করছে। “আমি মহাসচিবের সার্কেল অব লিডারশিপে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি।”
সুত্র- বাসস-