জিপি নিউজঃ আমরা প্রথমে যখন একটি স্বপ্ন দেখি, কিছু লোক সেই স্বপ্ন শুনে হাসে। যখন স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাই, তখনও তারা পাছে কথা বলে। আর যখন স্বপ্নটা ছুঁয়ে ফেলি, তখন সেই মানুষগুলোই বলে, ‘আমি জানতাম তুমি পারবে!’
যেই মানুষটির নাম শুনে আপনি এখন এই পোস্টটি পড়ছেন, তাকে আসলে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার তেমন কিছু নেই। তিনি এমনই একজন মানুষ, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নয়াপল্টনের দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচতলায় অবস্থিত বিএনপির সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের লেখা বই ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রয় করে থাকেন ।
“কষ্ট ও দুঃখ” কত ছোট্ট দুটি শব্দ অথচ এর ব্যাপকতা আর ভয়াবহতা কতটা তীব্র আর অসহনীয় তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। দারিদ্রতা কথাটি যেন দুঃখ আর কষ্টের বেড়াজালে আবদ্ধ। কথায় বলে, অভাব যখন আসে তখন ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায়। কিংবা কবির ভাষায় বলি না কেন, ‘পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’।
এই অভাবের তাড়নায় কত শত প্রতিভা যে অন্কুরে বিনষ্ট হয় তা আল্লাহই ভাল জানেন। আবার এই দারিদ্র্যতাকে জয় করে কত কত মহান মানুষ ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন আলো ছড়াচ্ছেন।
মহীয়সিদের জীবন তো সবার জানা। কিন্তু আমাদের দেশেই কত মানুষ আছেন যারা দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে আজ জীবনে সফল। শুধু তাই না তারা আজ আমাদের অনুকরনীয়।
প্রিয় পাঠক যার কথা বলছি তাঁকে হয়ত ইতিমধ্যেই আপনি চিনতে পেরেছেন আর যদি না পারেন তাহলে জেনে নিন তিনি হলেন পাঠকের মনের ক্ষুধা মিটানো বই বিক্রেতা মোঃ নাসির উদ্দিন যাকে সবাই নাসির বলেই চিনে । নাসির সাহেব ১৯৬১ সনের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার সদর কোতোয়ালি থানার বড় বাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । দুই ভাই, তিন বোন ও মা–বাবা নিয়ে তাদের ৭ জনের সংসার । ভাইদের মধ্যে তিনি সবার বড় হলেও ভাই-বোনদের মেধ্যে তৃতীয় ।
শৈশবে তিনি তার গ্রামের স্কুল থেকেই প্রাইমারী লেখালড়া শেষ করেন । কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যার তুলনায় তার পিতা-মাতার আয় রোজগার তেমন বেশী ছিল না । তাই সব সময় তাদের পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকত । পরিবারের কথা চিন্তা করে তিনি একসময় তার নানার বাড়িতে চলে যান এবং সেখান্ থেকেই লেখাপড়া চালীয়ে যান । তার নানার কাসা-পিতলের ব্যবসা ছিল। তিনি স্কুল থেকে এসে নানার কাঁসাপিতলের দোকান দেখাশোনা করতেন, এভাবে নান-নাতির মিলিতভাবে দোকানের ব্যবসা ভালই চলছিল কিন্তু একদিন হঠাত করে নানার সাথে ব্যবসা নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি মান-অভিমান করে ১৯৮২ সালে তার এক গ্রামের বন্ধু আব্দুল লতিফের সাথে ঢাকায় চলে আসেন । ঢাকায় এসে তিনি তার সেই বন্ধুর পরিচিত বিখ্যাত নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক জনাব আমজাদ হোসেনের শুক্লা ফিল্মস ইন্ডাস্ট্রিতে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন । ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরির সুবাদে তিনি প্রায় ৫০ টি জেলার ২০০ এর বেশী থানায় ও বিভিন্ন এলাকা সফর করেন । কারন সে সময় তাদের প্রোডাকশন থেকে নতুন ছবি মুক্তি পেলে বা অনেক সময় পুরানা ছবির রিল নিয়ে তাঁকে বিভিন্ন জেলা বা থানা এমনকি মফঃস্বল শহরের বিভিন্ন সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে যেতে হত । এভাবে নাসির সাহেবের জীবন বেশ ভালো ভাবেই কাটছিল । কিন্তু হঠাত করে চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দা দেখা দিলে তাদের প্রোডাকশন হাউজের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, স্বভাবতই তার চাকরির অবস্থাও খারাপ হতে থাকে ।
প্রায় দশ বছর চাকরি করার পর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে তারই সহকর্মী বন্ধু মোঃ মানিক মিয়া প্রধানের সহযোগিতায় ১৯৯৩ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচে অবস্থিত বিএনপি’র সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের দোকানে চাকরি গ্রহন করেন । নানান ঝুটঝামেলা, হয়রানি-প্রেসানি ও অভাব অনটনের মাঝে এখনও পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত আছেন শুধু দলেরটানে দলকে ভালোবেসে । সংসারের নানান অভাব অনটনের মাঝেও তিনি তার ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলনে চান এটা তার দৃঢ় প্রত্যয় । এক প্রশ্নের জবাবে নাসির সাহেব বলেন- চোখের সামনে দেখা দলের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেকেই জিরো থেকে হিরো হয়েছেন, অগাদ টাকা পয়সা ও সম্পদের মালিক হয়েছেন কিন্তু তিনি তেমন সহযোগিতা পাননি । তবে দু-একজন তার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য কিছু সহযোগিতা করে থাকেন তাদের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, না হলে হয়ত তাঁকে ঢাকা থেকে অন্য কোথায়ও আশ্রয় নিতে হত ।
নাসির উদ্দিন দৃঢ়তার সহিত বলেন যতদিন বেঁচে থাকবেন দলের হয়ে কাজ করে যাবেন । সেইসাথে দলের নেতাকর্মীদের লেখা বই ও অন্যান্য সামগ্রী দলের সকল কর্মী ও সমর্থকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় তার অন্যতম লক্ষ বলে তিনি জানান, যাতে দলের প্রতিটা নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা দল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে , পড়তে ও শিখতে পারে এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন ।