জিপি নিউজঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘তালেবান জঙ্গিরা বিভিন্ন গোপন আস্তানা থেকে যে রকম উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা পাঠায়, তার অবিকল উগ্র চরমপন্থী মতাদর্শী প্রচারণামূলক ভিডিও আমি নিজে দেখেছি।’
রবিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, ‘তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ও ওসামা বিন লাদেনের মতো ভিডিও বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, জঙ্গিরা যেভাবে শেষ অস্ত্র হিসেবে নারীদের ব্যবহার করে, সেভাবে কোটা আন্দোলনেও ছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এসব মেনে নেবে না। ফৌজদারি অপরাধ করলে আইনের শাসন কার্যকর হতে হবে।
কোটা আন্দোলনের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ আছে কি না, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কোন সংগঠন জানি না। কিন্তু ফেসবুকে যে ভিডিও দেখেছি, সে ভিডিও জঙ্গিদের ধরনের। সেখানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কথা বলা হয়েছে। এসব দেখে মনে হয়েছে অশুভ কোনো শক্তির তৎপরতা রয়েছে।’
শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, অশুভ শক্তির তৎপরতায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশুভ শক্তি ঢুকতে চাচ্ছে। তার প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে ফোন করে তাদের এক সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিথিলতা দেখিয়েছে। প্রক্টর অফিস ভাঙচুর ও উপাচার্য বাসভবনে হামলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলায় অপরাধীদের ধরতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য বলেন। কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে তারা ব্যথিত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো। তবে অশুভ তৎপরতা আছে। কোনো অশান্ত পরিবেশ বরদাশত করা হবে না।
এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন, সহ-উপাচার্য আবদুস সামাদ ও প্রক্টর গোলাম রব্বানী।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে প্রগতিশীল ছাত্র জোট উপাচার্যের কাছে চারটি দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সন্ত্রাস-সহিংসতা, দখলদারি মুক্ত শিক্ষায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকরী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্মারকলিপির ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, তিনি এসব বিবেচনা করবেন। তবে স্মারকলিপির ভাষার ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
রবিবার বেলা ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে সাম্প্রতিক নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, সহিংসতা ও হয়রানির প্রতিবাদে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পদযাত্রাটি শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।