জিপি নিউজঃ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলা তুলে না নিলে আবার আন্দোলনে নামার হুমকি এসেছে।
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তুমুল আন্দোলনের মধ্যে গত ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ‘কোটা থাকার দরকার নাই’ বলে বক্তব্য দেয়ার পর স্থগিত কয়েছে আন্দোলন। তবে এর মধ্যে আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন দুই মামলা নিয়ে।
গত ৮ এপ্রিল শাহবাগ মোট প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর সেখান থেকে ছাত্রদের তুলে দেয় পুলিশ। আর এই চেষ্টায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়ায়। এর রেশ থাকে রাতভর। শাহবাগ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্ররা। আর এতে এক ছাত্রের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে রাতে উপাচার্য বাসভবনে বেপরোয়া হামলা হয়। হামলাকারীরা গাড়ি, বাসার আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কার, প্রত্মতাত্ত্বিক সামগ্রী এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র লুট করে বা নষ্ট করে। এই হামলাকারীদেরকে ছাড় না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই ঘটনায় হয়েছে মোট চারটি মামলা। একইভাবে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনাতেও সমানসংখ্যক মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনকারীদের নেতা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর হোসেন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভিত্তিহীনভাবে যে অজ্ঞাতনামা মামলা দিয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা এখনো প্রত্যাহার করেনি। আগামী দুই দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে অজ্ঞাতনামা মামলা দিয়েছে তা প্রত্যাহার না করলে ছাত্রসমাজ আবার আন্দোলনে নামবে।’
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি জড়িয়ে পড়েছিল বলে সরকারের কাছে তথ্য আছে। আর গত ৯ এপ্রিল সচিবালয়ে সমঝোতা বৈঠকের পর কর্মসূচি স্থগিত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার আন্দোলনে ফেরা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কারও মুক্তির আন্দোলনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে ছাত্রদের সচেতন থাকার তাগিদও দেন তিনি।
তবে কোটা আন্দোলনের নেতা নুর হোসেন তাদের আন্দোলনের কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সব কিছু তদন্ত করে দেখেছে। আমাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না। কিন্তু তারা নেগেটিভ কিছু না পাওয়ায় আমাদের হয়রানি করেনি।’
‘যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন, তখন একটা কুচক্রি মহল আমাদের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত বলে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
‘আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কিত করা মানে সরকারকে বিতর্কিত করা। দেশকে অস্থিতিশীল করা।’
কোটা আন্দোলনের নেতা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসায় হামলায় কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী জড়িত নয়। কিন্তু একটি জাতিয় দৈনিক রিপোর্ট করেছে কেন্দ্রীয় কমিটির একজনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
‘ ভিসির বাড়িতে হামলার সাথে জড়িতদের তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করব। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয় তাহলে বাংলার ছাত্র সমাজ মানবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমি বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মুহাম্মদ মহসীন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আমার পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানও বক্তব্য দেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। রাশেদ বলেন, ‘আমার যে রুম নম্বার দেওয়া হয়েছে সেটাও ভুল দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে আমার বাবার নাম ও ভুল দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যা তথ্য দেওয়া হয়েছে সব ভুল।’
পরিষদ এর যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা আন্দোলন থেকে সরে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশের একটা কুচক্রি মহল এখন আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।’
‘আজকে বাংলাদেশের একটা জাতীয় দৈনিক রিপোর্ট করেছে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি নাকি বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। অথচ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের ডিটেইলস গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে গেছে। তারা তখন কিছু পায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের নেগেটিভলি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
‘সারা বাংলার ছাত্র সমাজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন না’ এমন আহ্বান জানিয়ে বিকাল পাঁচটার মধ্যে ইত্তেফাক তার সংবাদ প্রত্যাহার না করলে পত্রিকাটিকে বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন ফারুক হোসেন।