ঢাকায় শান্তিতে নোবেলজয়ী তিন নারী বলেছেন, “অং সান সুচি যদি নিরবতা ভেঙে রোহিঙ্গাদের পাশে না দাঁড়ান, তাহলে তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷ কারণ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে৷ এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ৷”
তিন নোবেলজয়ী নারী – ইরানের শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের মারেইড ম্যাগুয়ার এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান রবি, সোম ও মঙ্গলবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ তারা সেখানে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন৷ জানেন তাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের কথা৷ বুধবার দুপুরের পর তারা ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে তাদের সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন৷
ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, “আমরা অন্তত ১০০ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছি৷ এরা সবাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ সন্তানের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ এমন অনেক শিশু পেয়েছি, যাদের মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে৷ আগুনে ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে শিশুদের৷”
তিনি বলেন, “রাখাইনে এ সমস্ত অপরাধ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার৷ নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি সরকার প্রধান হয়েও চুপ করে আছেন এবং এ জন্য তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী৷”
কারমান সুচিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনাকে সত্য প্রকাশ করতে হবে৷ রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ অন্যথায় আপনাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷ আমরা নোবেল বিজয়ী হিসাবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷”
মারেইড ম্যাগুয়ার বলেন, “আমরা সবাই মানব পরিবারের সদস্য৷ অং সান সুচি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম৷ তাই তার এখন মনে রাখা উচিত, রোহিঙ্গাদেরও মানবিক অধিকার আছে৷ তাদের ওপর যে হত্যা নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়৷”
আন্তর্জাতিক আদালতে এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইরানের শিরিন এবাদি বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে এই বিচার কাজের জন্য দু’টি উপায় রয়েছে৷ একটি হচ্ছে, সেই দেশটি যদি আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য হয়ে থাকে তাহলে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া যায়৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা যদি এই সংস্থার সদস্য না হয় তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে আন্তর্জাতিক আদালতে এদের বিচার সম্ভব৷”
সুদানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “দেশটি আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য ছিল না, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপের কারণে সুদানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে৷”
শিরিন এবাদির কথায়, “মিয়ানমার সফরের জন্য আমরা ভিসার অ্যাপ্লাই করবো৷ তারা যদি আমাদের ভিসা না দেয় তাহলে সেটি মিয়ানমারের জন্য ভুল হবে৷”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে এই তিন নোবেলজয়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন৷ নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে তারা বলেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের হত্যা নির্যাতনের দায় নিতে হবে৷
এছাড়া তারা রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, “এরপরও বিশ্ব সম্প্রদায় কীভাবে নীরব রয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত৷”
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, “বাংলাদেশ মানবিক কারণে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিজ মাটিতে আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসাবে অভিহিত করেন এই তিন নোবেলজয়ী৷” নোবেল উইমেন’স ইনিশিয়েটিভ এবং নারীপক্ষ এই তিন নোবেল বিজয়ী নারীর বাংলাদেশ সফরের আয়োজন করে৷ এরা বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরবেন৷-ডয়চে ভেলে