বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পথিকৃৎ, খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র-নাটক নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন আজ সোমবার।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকেনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়েজুর রহমান। একাত্তরে পাকাবাহিনী তাকে হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় লেখক যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ইন্তেকাল করেন।
হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জš§দিন উপলক্ষে এসিআই পিওর সল্টের পৃষ্টপোষকতায় চ্যানেল আই ‘হুমায়ূন মেলা’র আয়োজন করেছে। আজ সোমবার বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আই চত্বরে দেশের বিভিন্ন অঙ্গণের বিশিষ্টজনেরা এ মেলার উদ্বোধন করবেন।
স্কুল জীবনে হুমায়ূন আহমেদকে পিতার চাকরিস্থলে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস‘ শঙ্খনীল কারাগার। এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়ে ওঠেন। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্বক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। মানুষের মানচিত্রও উঠে এসেছে। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ বলেছেন সমোলোচরা। তিনি উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক, চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, কয়েকটি চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত দশকের একজন সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় লেখক হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরববর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ূন আহমেদ গাজিপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ নুহাশ পল্লী ।’ এই প্রতিষ্ঠানই ছিল তার সকল কাজের আঙ্গিণা।
হুমায়ূন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। এই সংস্থার স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাসসকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ গত শতকের অন্যমত জনপ্রিয় লেখক। তার সৃষ্টিশীলতার জন্যই তিনি এই জনপ্রিয়তা পান। মৃত্যুর পরও পাঠকরা তার বই কিনছে। তরুণ সমাজ ও নতুন পাঠকরা এখনও তার লেখাগুলো কিনছে। তার লেখা পুরনো বইগুলো এখন বিভিন্ন বয়সের পাঠক সংগ্রহ করছেন। বাংলা সাহিত্যে এই লেখকের সৃষ্টি অনাদিকাল অক্ষয় রবে।
তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, হোটেল গ্রেভারইন, দেবী, অনন্ত অম্বরে, কোথাও কেউ নেই, জ্যো¯œা ও জননীর গল্প, আগুনের পরশমনি, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, আয়না ঘর, একজন মায়াবতী, কে কথা কয়, অপেক্ষা, আমার আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হলুদ হিমু কালো র্যাবসহ হিমুকে নিয়ে লেখা সিরিজ, মিসির আলী সিরিজ, শুভ্র সিরিজ। হাতেগল্প পঞ্চাশ, আমিউ মিছির আলী, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, দিঘির জলে কার ছায়া গো, লিলুয়া বাতাস, হুমায়ুন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, কূহক, পাপ ৭১, শ্রাবন মেঘের দিন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, শ্যামল ছায়া। সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর মেলা আয়োজনের সম্পর্কে বাসসকে জানান, হুমায়ূন আহমেদ নানাভাবে চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক নাটক ও সিনেমা তৈরি করেছেন এবং নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তাকে নিয়ে এ ধরনের একটি মেলার আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত।
তিনি বলেন, অন্যবারের মতো এবারও মেলায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপিত হবে। মেলায় লেখকের বই, চলচ্চিত্র, নাটকসহ তার কর্মজীবনের নানা সামগ্রীর স্টল থাকবে। পরিবেশিত হবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান, নাচ, আবৃত্তি ও স্মৃতিচারণ। মেলা চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই ও রেডিও ভূমি।
সুত্র- বাসস