জিপি নিউজঃ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা গাইবান্ধায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের বহু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং তিনজন সাঁওতালকে হত্যার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার জন্য এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।
তবে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা ছাড়া, অভিযুক্ত কাউকেই এক বছর পরেও চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। উচ্ছেদকৃত সাঁওতালদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।
বর্তমানে কেমন আছেন গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা?
ওই ঘটনার এক বছর উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জে আজ সমাবেশ করেছে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটি। তাদের দাবী এক বছর আগের ঐ ঘটনায় দোষীদের বিচার এবং সাঁওতালদের নিজেদের বাস্তুভিটায় পুনর্বাসন করতে হবে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাফায়েল হাসদা। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, দোষীদের চিহ্নিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ, উল্টো ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা প্রায়ই তাদের হুমকি দেয়।
“আমাদের ভাইদের মেরে ফেলেছে, আহত করেছে, আবার উল্টা আমাদের নামেই মামলা করেছে। আর আমরা যে মামলা করেছি, তার কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আবার যেখানে আমাদের পুনর্বাসন করতে চায় সেটা তো আমাদের জন্য না, ওটা গৃহহীনদের জন্য।”
“আমাদের দাবী আমাদের বাপদাদার ভিটায় পুনর্বাসন করা হোক, নদীর মধ্যে চরে আমরা যাব না।”
এদিকে, ঐ ঘটনার পরপরই সাঁওতালদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের সময় সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে পুলিশ ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই প্রেক্ষাপটে, কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছিল। শুরুতে ঐ ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এরপর ডিসেম্বরে সাঁওতালদের বাড়িঘরে কারা আগুন দিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে গাইবান্ধার জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তখন তদন্ত কাজ বন্ধ রাখে মানবাধিকার কমিশন।
এদিকে, বর্তমানে তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন মিয়া বলছিলেন, আরো সময় লাগবে তদন্ত শেষ করতে।
“এ পর্যন্ত তিনজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলছে, আরো সময় লাগবে কাজ শেষ করতে। ওরা স্বাক্ষ্য প্রমাণ ঠিকমত দিতে পারে না, যে কারণে এখনো সবাইকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।”
ঐ ঘটনায় পুলিশ ছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। পুলিশ বলছে, ইতিমধ্যেই স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। তবে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, যারা জড়িত তারা সত্যিকারের আওয়ামী লীগ নয়। বলছিলেন গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার।
“যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা সত্যিকারের আওয়ামী লীগ নয়। ফলে ক্ষমতাসীন দলকে এখানে অভিযুক্ত বলা ঠিক হবে না।”
১৯৫৬ সালে গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ চিনি কলের জন্য প্রায় দুই হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। সেখানে তখন ২০টি গ্রামের মধ্যে ১৫টিতে সাঁওতালদের বসবাস ছিল। বাকি পাঁচটি গ্রামে বাঙালীদের বসবাস ছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে গেলে সাঁওতালরা সে জমিতে আবারো ফেরত আসার চেষ্টা করে। চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জায়গা থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ৬ই নভেম্বর সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। তবে, পুলিশের অভিযোগ সাঁওতালরা তাদের ওপর আক্রমন চালিয়েছে।
এদিকে, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদকৃত পুনবাসনের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই পুনবাসনের ব্যবস্থা হবে।
“‘সাঁওতালদের পুনর্বাসনে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে তিনটি আছে গুচ্ছগ্রাম, সেখানে তারা ঘর তুলে বসবাস করতে পারবেন। এছাড়া তাদের কাজের এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।”
তবে, সাঁওতালরা এ ব্যবস্থা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে আজকের সমাবেশেও। মি. হাসদা বলছিলেন তেমনটাই।
সুত্র- বিবিসি