জিপি নিউজঃ বহুল আলোচিত দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুভাষ চন্দ্র সাহাকে এরই মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা। সুভাষ চন্দ্র সাহাকে নিয়েই এখন দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কে এই সুভাষ চন্দ্র সাহা? কোথায় তার এতো টাকার উৎস এবং এতো বড় দুর্নীতিবাজ হওয়ার পরও কিভাবে পেলেন পিপিএম পদক ইত্যাদি নানা বিষয়ে জানার আগ্রহ এখন সবার। তার সম্পর্কে খোঃজ-খবর নিয়ে জানা যায়, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামের মৃত সূর্য কান্ত সাহার সন্তান সুভাষ চন্দ্র সাহা। নিজ গ্রামের স্কুল থেকে মানবিক শাখা হতে ১৯৮৮ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৯০ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে মানবিক শাখায় এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে অনার্স ( সন্মান) এবং ১৯৯৪ সালে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে ৪র্থ স্থান নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন । ২১তম বিসিএস এ উত্তির্ণ হয়ে ২০০৩ সালের ১০ মে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে মৌলভীবাজারে যোগদান করেন। এরপর তিনি একই পদে সিলেট সদর, বরগুনা ও পিরোজপুর এর বিভিন্ন সার্কেল এর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পিরোজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালের ৫ই মে পুলিশ সুপার হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। একইবছর ১৪ই জুন ঝালকাঠি জেলা পুলিশ এর দায়িত্বভার পান। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ক্ষমতাসীনদের অতি আনুগত্যের কারণেই তাকে বিশ্বস্ত হিসেবে ফরিদপুরে নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে। ভেতরে ভেতরে বড় দুর্নীতিবাজ হলেও উপরে উপরে ছিলেন সজ্জন পুলিশ কর্মকর্তা। এভাবে এক যুগের বেশি সময় দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড দেখিয়ে কৃতিত্ব পূর্ণ অবদান এর জন্য চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তাকে পি পি এম ( সেবা) পদকে নাম ঘোষণা করা হয় । উল্লেখ্য, প্রতি বছর বিশেষ অবদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পিপিএম ও বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পদক প্রদান করা হয় । সাহসিকতা ও সেবা এ দু’টি ক্যাটাগরিতে এসব পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর ১৩২ জনকে পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে তিনি একজন। চলতি বছরে গোড়ার দিকে রায়েরবাজার পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে তিনি পিপিএম পদক গ্রহণ করেন। এসপির এতো টাকার উৎস কী? দুদক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাজধানীর বংশাল থানায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুভাস চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীর যৌথ নামে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকার এফডিআর পাওয়া যায়। যা ওয়ান ব্যাংকের রাজধানীর বংশাল শাখা ও এলিফ্যান্ট রোড শাখা এবং যশোরের ওয়ান ব্যাংক শাখাতে গচ্ছিত ছিল। কিন্তু পুলিশ সুপার ওই অর্থ দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী কিংবা আয়কর নথি উপস্থাপন না করে গোপন রেখেছেন। এমনকি দুদকের অনুসন্ধানেও ওই আয়ের যথাযথ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। গচ্ছিত টাকার মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের বংশাল শাখার ৬টি এফডিআরে ২ কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৭, এলিফ্যান্ট রোড শাখায় ১টি এফডিআরে ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৪২ এবং যশোরের ওয়ান ব্যাংক শাখাতে ১২টি এফডিআরে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৫৮ টাকা পাওয়া যায়। তাই অনুসন্ধান কর্মকর্তার সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই-বাছাই শেষে স্ত্রীসহ পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার আইনের ৪(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করার জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দিয়েছিল কমিশন। আমার কাজই বলে দেবে আমি ভাল না, খারাপ: সুভাষ চন্দ্র গত বছরের ৬ নভেম্বর ফরিদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন সুভাষ চন্দ্র সাহা। ৭ নভেম্বর স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন তিনি। ফরিদপুরের আইন শৃংখলারক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে নবাগত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, তিনটি বিষয়ে আমি কোনো ছাড় দিতে রাজি নই। এ তিনটি বিষয়ে আমার মনোভাব থাকবে একেবারেই ‘জিরো টলারেন্স’। এ তিনটি বিষয় হলো, মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের ওপর কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না, দ্বিতীয়ত কোনো নারীর প্রতি অন্যায় অবিচার হলে সে যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর তৃতীয়ত, যারা অসহায় তাদের ওপর কোনো জুলুম-অন্যায় করা হলে জড়িতদের কোন ছাড় দেয়া হবেনা। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ফরিদপুর জেলাকে দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। যাতে করে অন্যজেলার মানুষ ‘ফরিদপুর’কে নিয়ে গর্ব করতে পারে। সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিংসহ অপরাধমুলক কর্মকান্ডে যারা জড়িত রয়েছে তাদের কোনো ছাড় নেই। আমার কাছে কোনো তদবির চলবে না। পুলিশ সুপার বলেন, আমার উপর আপনারা আস্থা রাখতে পারেন। আমি নতুন এসেছি। আমার কাজই বলে দেবে আমি ভাল না, খারাপ। কোথাও কোনো অন্যায়-অবিচার হলে আপনারা আমাকে জানাতে পারবেন। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেবো-এটা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, সাংবাদিক প্রফেসর মোঃ শাহজাহান, আবদুল মতিন ফকির, আতম আমীর আলী টুকু, জাহিদ রিপন, পান্না বালা, নাজিম বকাউল, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী শংকর, মশিউর রহমান খোকন, সেলিম মোল্লা প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় ফরিদপুরে কর্মরত ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।