জিপি নিউজঃ রাজধানীতে হঠাৎ করে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি । রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় ভালো মানের নাজির শাইল ও মিনিকেট চাল গতকাল এ দামেই বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ৬০ টাকা। কিছুটা ভালো মানের মোটা চাল হিসেবে পরিচিত বিআর-২৮ গতকাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ১০ টাকা কম। আর স্বর্ণা ও পারিজা গতকাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এ চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। চালের এ দরবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা দরে। এ ছাড়া ভালো মানের মিনিকেট কেজিতে ৯ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা দরে, মিনিকেট (সাধারণ) ৬০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৮ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৭০ টাকা, পাইজাম চাল ৫৫ টাকা, বাসমতি ৭২ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আড়তদাররা দায়ী করছেন মিলমালিকদের। আর আড়তদারদের দায়ী করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, হাওরে বন্যার কারণে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে চালের দাম এতটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ নেই। এর পেছনে কারসাজি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরা বিক্রেতারা। মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা সোলায়মান এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বেশি দামে কিনি, বেশি দামে বিক্রি করি। কম দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করি। কেজি দুই টাকা লাভ করলেই যথেষ্ট। তবে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে চালের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অশনি সঙ্কেত হিসেবে দেখছেন ক্রেতারা। তালতলা মার্কেটের ক্রেতা শামসুদ্দিন গতকাল অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে নয়া দিগন্তকে বলেন, তিন মাসের ব্যবধানে ৪০ টাকার চাল ৭০ টাকায় উঠে গেল, সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে? তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। মুখে বলছেন, দেশে চালের কোনো সঙ্কট নেই। আবার বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চাল আমদানির জন্য। বলছেন, পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আবার আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করছেন। যেসব ব্যবসায়ী চুক্তি করেও সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ দিকে দুই সপ্তাহ কিছুটা সহনীয় থাকার পর সবজির দাম আবার বেড়েছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কচুর লতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরমুখি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পালং শাকের আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা এবং লাউশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মুদি দোকানে গতকাল প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাই ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২৫ টাকা এবং ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। দেশী পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, দেশী রসুন ১১০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন বিক্রি হয় ১৩০ টাকা দরে। ব্র্যান্ডভেদে ভোজ্যতেলের পাঁচ লিটারের বোতল ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ থেকে ৫৪০ টাকা, প্রতি লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হয়। ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ৫ টাকা। ৮০ টাকার ডিম এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২০০ টাকা এবং পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের কারণে বিক্রি কম হলেও প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে প্রতিটি ইলিশ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারে প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি
Facebook Comments