বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং লেখক ফরহাদ মজহার এর অপহরণে ভারতের হাত থাকতে পার বলে অভিযোগ করেছ মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। শুক্রবার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। ফরহাদ মজহারের অপহরণ, মুক্তি ও পুলিশি হেফাযতে নেওয়াসহ পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ফরহাদকে অপহরণ এবং গুম করার চেষ্টা একটা খারাপ নজির এবং সমালোচকদের জন্য বড় রকমের হুমকি। যারাই বর্তমান সরকারের শাসন কিংবা ভারতের এ দেশে হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করবে তাদের জন্য এটা হুমকির ইঙ্গিত।
অপহরণের এ ঘটনা নিয়ে সাতটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এএইচআরসি। সংস্থাটি বলছে, যদি অপহরণের তদন্ত সঠিকভাবে না হয় এবং এর তথ্য-প্রমাণ জনসম্মুখে প্রকাশ না করা হয় তাহলে এ মামলাও ঐ অভিযোগকে প্রমাণ করবে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ঢাকা নয় নয়া দিল্লির হস্তক্ষেপে হচ্ছে।
এএইচআরসি বলছে, ফরহাদ মজহার যখন ক্ষুধার্ত, আইনজীবিহিন অবস্থায় ছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফরহাদের অবস্থান আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দ্রুত শনাক্ত করার সামর্থ থাকা স্বত্ত্বেও কোন বিষয়টি তাদের এটা করা থেকে বিরত রেখেছে। তিনি যখন ১৮ ঘন্টার ব্যবধানে ৩০০ কিলোমিটার দূর ভারত সীমান্তের নিকট চলে যান তখন তাকে উদ্ধার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যদি ফরহাদকে সন্ত্রাসীরাই ধরে নিয়ে থাকে তাহলে কিভাবে র্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে তা সম্ভব হলো? এটাকে এ কথা মনে করিয়ে দেয় না যে, এ অপহরণের পিছনে র্যাব-পুলিশের হাত রয়েছে। নাকি এর পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে-যেটা এদেশের একটি অংশের মানুষের ধারণা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফরহাদের মামলা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশও এটা প্রকাশ করে যে মামলার পিছনে ভারতের হাত রয়েছে।
অপহরণের এ ঘটনাটি ৩ জুলাই বিবিসিসহ সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিছু লোকতো প্রকাশ্যে বলছে ফরহাদের অপহরণের পিছনে ভারত সরকারের হাত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তারা পূর্বে অপহরণ হওয়া মাওলানা সাঈদির সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের মামলার কথা বলছে। উভয়জনকেই অপহরণের পর রহস্যজনকভাবে ভারতে পাওয়া গেছে। এসময় তারা ছিলো বিধ্বস্ত অবস্থায় ।
এএইচআরসি তাদের বিবৃতিতে যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছে, সেগুলো হল:
১. ফরহাদ কোথায় আছেন তা দ্রুত শনাক্ত করার সামর্থ থাকা স্বত্ত্বেও কোন কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ১৮ ঘণ্টা পর ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বে ভারত সীমান্তের নিকটে যাবার পর তাকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলো?
২. যদি ফরহাদকে সন্ত্রাসীরাই অপহরণ করে থাকে তাহলে কিভাবে দেশে র্যাব-পুলিশের কড়া চেকপােস্টকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলো? এটা কি এ বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়না যে অপহরণের পিছনে র্যাব-পুলিশ থাকতে পারে?
৩. অপহরণের ঘটনায় কি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত? যেমনটা এদেশের মানুষের একাংশ বিশ্বাস করে থাকে।
৪. কর্তৃপক্ষ বলছে যে ফরহাদকে অপহরণের সময় একটি সাদা রংয়ের মিনি বাস শনাক্ত করা গেছে। বাসটি মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কি তদন্ত করা হয়েছে?
৫. ফরহাদকে কার জিম্মায় নেওয়া হবে তা নিয়ে কেন বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরে র্যাব-পুলিশ বাহিনী? এটা কি শুধুই উদ্বারের কৃতিত্ব নেবার জন্য নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে।
৬. মামলাটি নিয়ে র্যাব-পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য কি উপস্থাপন করে?
৭. মামলা যে সব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ফরহাদ যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। পুলিশ বলছে, ফরহাদকে উদ্ধারের সময় তার কাছে ব্যক্তিগত জিনিষপত্র পাওয়া গেছে, এগুলো তাহলে এখন কোথায় বা এগুলো কার কাছে রয়েছে?