জিপি নিউজঃ বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান লেখক এবং কলামিষ্ট ফরহাদ মাজহারকে কারা-কিভাবে তুলে গিয়েছিল, সে প্রশ্নের কোন উত্তর এখনো মেলেনি।
পুলিশ তাঁকে যশোর থেকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে মঙ্গলবার সকালেই। সেখান থেকে নিয়ে যায় আদালতে।
সেখানে এই অপহরণ রহস্যের ব্যাপারে তাঁর একটি জবানবন্দী নেয়া হয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন।
আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার টেলিফোনে বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খানকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
এতে তিনি জানিয়েছেন, ফরহাদ মজহারকে কারা-কিভাবে বাড়ির কাছ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, এ বিষয়ে তিনি নিজে এখনো পর্যন্ত কিছু বলার সুযোগ পাননি। তারা এখনও বুঝতে পারছেন না কে বা কারা তাকে অপহরণ করেছিলো। তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো নয়। সুস্থ হওয়ার পর তার সাথে কথা বলে তারা সেটা জানার চেষ্টা করবেন।
ফরিদা আখতারের সাক্ষাৎকারের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ:
রশ্ন: ফরহাদ মজহারকে সকালে প্রথম যখন দেখলেন, তখন তাকে কেমন দেখেছেন?
যশোর থেকে সকাল সাড়ে আটটায় উনাকে ঢাকায় আনা হয়, এর আদাবর থানায় নিয়ে আসা হয়। সেসময় উনাকে ভীষণ বিধ্বস্ত এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। অসম্ভব অসুস্থ মনে হচ্ছিল। কথাও তেমন বলছিলেন না। যতটুকু বলছিলেন, সেটা তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে। কতটা ক্লান্ত তিনি।
প্রশ্ন: এটা কি মনে হয়েছে যে উনাকে নির্যাতন করা হয়েছে?
উনার চোখ-মুখ ফোলা ছিল। চোখ বাঁধা ছিল সারাদিন। সেটার সঙ্গে আর কি কি হয়েছে সেটা আমরা উনার মুখ থেকে শুনলে বুঝবো। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় উনি যখন ফোন করেছিলেন, তখন উনি বলেছিলেন উনার চোখ বাঁধা।
প্রশ্ন: উনাকে কিছু খাওয়ানো হয়েছিল সেরকম কিছু কি মনে হয়েছে?
উনার কাছ থেকে এরকম কিছু আমরা এখনো শুনিনি। উনি গতকাল সারাদিন কিছু খাননি, উনার ঔষধ খাননি, তারপর এত ক্লান্তি এবং মানসিক ধকল। উনার চোখ-মুখ ফোলা, সেটা আমরা দেখেছি। অন্য কিছু আমরা চেক না করে বলতে পারছি না। আমরা এখন বাসায় নিচ্ছি। আমরা নিশ্চয়ই ডাক্তার দিয়ে চেক করাবো।
প্রশ্ন: উনাকে কারা কিভাবে নিয়ে গেলেন, সেটা নিয়ে কি কোন কথা-বার্তা উনার সঙ্গে হয়েছে? কোন ইঙ্গিত বা এ বিষয়ে কিছু কি বলেছেন?
না। আসলে থানায় পুলিশ আমাদের বেশি সময় দেয়নি। তাই আমরা সেই সময় পাইনি। তারপর ডিবি অফিসে নিয়ে গেল। তারপর সারাদিন কোর্টে। কাজেই আমাদের সঙ্গে দেখা সে হিসেবে খুবই কম হয়েছে।
প্রশ্ন: উনি নিখোঁজ হওয়ার পর এখন প্রায় ৩৬ ঘন্টা পার হয়েছে। আপনারা কি এখন ধারণা করতে পারেন, আসলে কি হয়েছিল?
আমরা আসলে এখনো সেরকম কোন ধারণা করতে পারছি না। কিছু বুঝতে পারছি না। আমরা উনার কাছ থেকে শুনলে জানতে পারবো যে উনি কতটা বুঝতে পেরেছেন।
প্রশ্ন: উনাকে নিয়ে এখন কী হচ্ছে? আমরা জানি যে উনাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমরা বুঝলাম না। কোর্টে নেয়ার ব্যাপারটা আমাদের কাছেও অবাক লেগেছে। উনি তো একজন ভিকটিম। উনি পুরো পরিস্থিতির শিকার একজন মানুষ। তাকে আ্জকে সারাদিন ডিবি অফিসে এবং কোর্টে নেয়া হলো। জবানবন্দী নেয়া হলো। একজন ভিক্টিমের ক্ষেত্রে এভাবে হয় কীনা।
প্রশ্ন: ফরহাদ মজহার আগামীকাল বা পরদিন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন, এটা কী আমরা আশা করতে পারি? কারণ এর আগে আমরা দেখেছি যারা এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন, তারা আর মুখ খোলেননি।
আমরা আগে দেখবো উনি যেন শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেন। আমরা উনাকে কোন চাপ দিতে চাই না কথা বলার জন্য। আমরা এটা চাই না। তারপর যদি পরিস্থিতি বুঝে উনি যদি বলতে চান সবকিছু, নিশ্চয়ই আমরা কথা বলবো। মিডিয়ার সঙ্গে উনি অবশ্যই কথা বলবেন যদি উনি চান।
সুত্র- বিবিসি