জিপি নিউজঃ ঘূর্ণিঝড় মোরা বাংলাদেশ উপকূলে আসার আগেই আবহাওয়া দপ্তর দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের ঘোষণা দেয়, যা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছিল সারা দেশে।
কিন্তু দশ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়ার কিছুক্ষণ আগেও উপকূলীয় অনেক জেলায় তেমন বৃষ্টি বা ঝড়ো অথবা দমকা হাওয়া না থাকায় ঝড় কতটা শক্তিশালী হয়ে আসছে তা নিয়েও আলোচনা ছিলো, খুব গুরুত্ব না দেওয়ারও চেষ্টা ছিল অনেক জায়গায়। এমনকি দশ নম্বর বিপদসংকেত দেয়ার পরেও উপকূলে সাগরকে ঠিক ততটা উত্তাল দেখা যায়নি, সাধারণত এ ধরনের ঝড়ের ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা যায়। এখন এসব কারণে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে দশ নম্বর বিপদসংকেতকে নিয়েই – যদিও আবহাওয়াবিদরা এটি আমলে নিতেই রাজী নন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নাইম ওয়ারা বিবিসিকে বলছেন, যে ধরণের বিপদসংকেত দেয়া হয়, তা আসলে বন্দরের জন্য। আর সে কারণে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত না করে বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপন করা যেতো।
তাঁর মতো স্যাটেলাইটের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা আগেই ধারণা দিয়েছিলো যে কোথায় কতটুকু পানি উঠবে কিংবা কোন পথ দিয়ে ঝড়টি যাবে। যেহেতু ভাটার সময় ঝড়টি আঘাত হানার কথা, তাই অহেতুক এতো মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ারও প্রয়োজন ছিলো না। সাতক্ষীরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত একই মাত্রার সংকেত – এটিও হাস্যকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপকূলের মানুষ বাতাসকে ভয় পায় না, তারা পানিকে ভয় পায়। সে কারণে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানুষকে জানানো যেতো আসলে কোথায় কতটা পানি উঠবে, তাহলে মানুষ এত বেশী আতঙ্কগ্রস্ত হতো না।
তবে তাঁর এ বক্তব্যের সাথে একমত নন ঢাকা আবহাওয়া অফিসে কর্মরত আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান। তিনি বলছেন, অনিশ্চয়তাকে মাথায় রেখে বাতাসের গতি, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা আর বিস্তৃতি বিবেচনায় নিয়েই দশ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, “যে গতিতে ঝড়টি এসেছে, যদি তার চেয়ে কম গতিতে আসতো, তাহলে হয়তো জোয়ারের শুরুর সময়টা হতো। আগে থেকে সতর্ক না করলে কত বড় বিপর্যয় হতে পারতো, সেটিও ভাবতে হবে”।
মিস্টার মান্নান বলেন সংকেত শুধু বন্দরের জন্য – এটিও অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। তবে যেহেতু সংকেত দেখানোর সক্ষমতা বন্দরের অনেক আগে থেকে আছে, এবং ফিশিং ও শিপিং-এর মতো বিষয়গুলো বন্দরের সাথে জড়িত, সেজন্য বন্দরকে সেটি দেখাতে বলা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। “অতি মাত্রায় সংকেত দেখানোর কোন সুযোগ নেই – সেই অভিপ্রায়ও আমাদের নেই। আমার লক্ষ্য একটাই, যেকোনো দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন রাখতে সবাইকে সতর্ক করা”।
তাঁর মতে আগে থেকে সতর্ক করা গেছে বলেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় শুন্যের কোঠায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, বাতাসের গতি ১১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠলে অবশ্যই দশ নম্বর সতর্ক সংকেত দিতে হবে। তাঁর মতে সংকেত যে অঞ্চলে ঝড় যাবে, শুধুমাত্র সেই অঞ্চলের জন্য না-কি আরো বিস্তৃত এলাকায় দেয়া হবে – সেটি বিশ্লেষণের বিষয়। এবারের ঘূর্ণিঝড় মোরা-কে সামনে রেখে দশ নম্বর বিপদসংকেত দেয়া ঠিকই ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুত্র- বিবিসি অনলাইন