জিপি নিউজঃ নামসর্বস্ব ৫৭ দল নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক জোট ঘোষণা করে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ । যদিও ঘোষিত এই জোটে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট ছাড়া অন্য ৫৬টি দলের নিবন্ধন নেই। এই জোট নিয়ে এরশাদসহ জাতীয় পার্টির নেতারা বড় ধরনের চমকের কথা শোনালেও গত ৯ দিনে দৃশ্যমান কিছু করতে পারেনি তারা। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে এরশাদ এই জোটের নাম ঘোষণা করলেও দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে এই জোট কোনো কভারেজ পায়নি। আগামী নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নের কথা বলা হলেও মানুষের মধ্যে কোনো আলোচনায় পর্যন্ত আসেনি এই জোট। বরং এরশাদের জোট ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা জনমনে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। খালেদা জিয়ার এই ঘোষণা দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। দেশের মানুষকে আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএনপির ভিশন। এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ভিশন ২০৩০।
প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল ইসলামিক ফ্রন্ট, মাসখানেক আগে ৩৪টি ইসলামপন্থী সংগঠন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা ‘জাতীয় ইসলামী মহাজোট’ এবং ২০১৫ সালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করা ৩১ সংগঠনের মধ্য থেকে নাজমুল হুদাকে বাদ দিয়ে ২২টি দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ রয়েছে এরশাদের এই নতুন জোটে। এই জোটে যুক্তফ্রন্ট নামের ১৫ দলীয় জোটের থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের আপত্তির মুখে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া আরো যারা আসার কথা ছিলÑ এখন তারাও পিছিয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার এরশাদের জোটে না এসে সরাসরি মতাসীন মহাজোটের অংশ হতে চাইছেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি ইসলামী দল আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাথে বৈঠকও করেছেন। ফলে এরশাদের বড় আকারে জোট করার হাঁক-ডাক এখন অনেকটাই অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে।
এ দিকে এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’-ইউএনএর কার্যক্রম রাজধানীর পাশাপাশি বিভাগ থেকে একেবারে জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে আসন্ন রোজার ঈদের পর প্রথমে প্রতিটি বিভাগে জোটের কর্মিসমাবেশ করা হবে। এরপর রাজধানীতে মহাসমাবেশের মাধ্যমে বড় আকারে শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সোমবার প্রথম বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এ দিকে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটে শুরু থেকেই প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও তারা মজলিসে শূরার বৈঠকের কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করে। যদিও এ বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সব দলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী। তবে এখনি কোনো জোটে যাবো কি না তা নির্ভর করছে আমাদের দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শূরার সদস্যদের মতামতের ওপর। শূরার বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে। তবে আপাতত শূরার বৈঠকের সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান।
জোট গঠনের ৯ দিনের মাথায় ভাঙনের মুখে পড়েছে নামসর্বস্ব দল নিয়ে গড়া এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)। আর্থিক লেনদেন ও নতুন জোটে আধিপত্য নিয়ে বিএনএতে এই ভাঙন ধরে বলে জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
৭ মে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট এবং জাতীয় ইসলামি মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) সমন্বয়ে ইউএনএ নামে ‘ঢাউস আকারের’ এই জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এরশাদ। এতে সর্বমোট দল ৫৬টি। সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের বৃহত্তম জোট, যদিও এর মধ্যে ৫৪টি দলই নামসর্বস্ব।
এর মধ্যে নামসর্বস্ব ২১-দলীয় জোট বিএনএ ভেঙে গেছে। সেখান থেকে ১১টি দল বেরিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে একই নামে আলাদা জোট গঠন করেছে। এতে গণজাগরণ পার্টির চেয়ারম্যান সেলিম হায়দারকে চেয়ারম্যান ও আমজনতা পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির আহমদকে সদস্যসচিব এবং গণ অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান হোসেন মোল্লাকে মুখপাত্র করা হয়েছে। তাঁরা জোটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলীকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেদের প্রকৃত বিএনএ দাবি করছেন।
হোসেন মোল্লা বলেন, সেকেন্দার আলীকে অব্যাহতি দিয়ে ১১টি দল মিলে বিএনএর নতুন কমিটি করা হয়েছে। দলগুলো হলো গণজাগরণ পার্টি, জাতীয় তফসিল ফেডারেশন, আমজনতা পার্টি, আওয়ামী পার্টি, গণ অধিকার পার্টি, ইসলামি গণতান্ত্রিক লীগ, প্রতিবাদী জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, তৃণমূল লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি। তিনি বলেন, জোটের নতুন কমিটি জাতীয় পার্টির কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরশাদ গ্রহণ করলে তাঁরা জোটে থাকবেন।
তবে সেকেন্দার আলী বলেন, পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় একজন তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আলাদা জোট করার চেষ্টা করছেন। তাঁর দাবি, বিএনএর মূলধারার সবাই তাঁর সঙ্গে আছেন। দু-চারজন এগুলো করে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েকটি দল গঠিত হয়েছে রাতারাতি।
এ অবস্থায় এখন জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে দলের সংখ্যা কত বা বিএনএর কোন অংশটি জোটে আছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিএনএর নতুন অংশের মহাসচিব বেনজির আহমদ বলেন, বিএনএতে আসলে দল ছিল ১৪টি। তাঁদের সঙ্গে আছে ১১টি দল। বাকি তিনটি দল আছে সেকেন্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাপা জোটে শেষ পর্যন্ত কে টিকবে, তা পরে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রধান মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিএনএর সবাই সেকেন্দার আলীকে নেতা মানতেন। তাঁদের মতানৈক্য নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করার কথা। এরপর কেন এমন হলো, তা তাঁর জানা নেই। তিনি দাবি করেন, তাঁদের জোটে দলের সংখ্যা ঠিক আছে। আরও কেউ জোটে আসতে চাইলে আসতে পারে। তাতে দলের সংখ্যা বাড়বে।