জিপি নিউজঃ কলকাতার বিখ্যাত টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নুর ঊর রহমান বরকতিকে ইমাম পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে মসজিদ পরিচালন কমিটি।
মি. বরকতি নিয়মিতই বিতর্কিত মন্তব্য আর ফতোয়া জারি করে থাকেন, কিন্তু অতি সম্প্রতি তিনি কয়েকটি মন্তব্য করে ফের সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন।
প্রথমত ভারত সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী নিজের গাড়ি থেকে লালবাতি সহ বীকন খুলতে অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন যে গাড়িতে লালবাতি লাগানোর অধিকার নাকি তাঁর পরিবারকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ব্রিটিশ সরকার দিয়ে গিয়েছিল।
তাই একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বললেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশ মানবেন।
তবে, মিজ ব্যানার্জীর ঘনিষ্ঠতম এক মুসলিম মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে মি. বরকতি লালবাতি সরিয়ে নেন।
তবে এর থেকেও বিতর্কিত যে মন্তব্যটি তিনি করেছিলেন, তা হল, ভারতকে যদি আর এস এস হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে তাহলে দেশের কোটি কোটি মুসলমানকে পাকিস্তান দিয়ে দেওয়া হোক। তারা পাকিস্তানের জন্য লড়াই করতেও প্রস্তুত বলে মন্তব্য করে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
শুধু সাধারণ মানুষ বা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি নয়, তাঁর সমালোচনায় মুখর হয় মুসলমান সমাজও।
রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং জমিয়ত এ উলেমা এ হিন্দ-এর রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে টিপু সুলতান মসজিদের সামনে এক নজিরবিহীন জমায়েত করেন শনিবার।
রাজ্যের মন্ত্রী মি. চৌধুরী এই অভিযোগও তুলেছিলেন যে নুর ঊর রহমান বরকতির সঙ্গে বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে এবং তিনি চরম হিন্দু বিরোধী কথা বলে আসলে হিন্দু ভোট একজোট করারই প্রচেষ্টা করছেন।
মুসলমান যুব নেতা মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছিলেন, “এধরণের কথাবার্তা বলে বরকতি সাহেব মুসলমান সমাজেরই ক্ষতি করছেন। এর থেকে ফায়দা তুলছে বি জে পি।”
মসজিদ পরিচালন কমিটি আগেই বলেছিল যে ওই বিতর্কিত ইমামকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যে প্রায় নেওয়া হয়ে গেছে।
টিপু সুলতানের বংশধর ও মসজিদটির মোতোয়ালি আনোয়ার আলি শাহ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “মি. বরকতিকে ইমামের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত তাঁকে বুধবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক আর বিতর্কিত মন্তব্য করতে তাঁকে অনেকবার বারণ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি শোনেন নি। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তারও জবাব পাই নি। তাই তাঁকে ইমামতির কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি আমরা।”
তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন মি. বরকতি।
যে পরিচালন কমিটি তাঁকে নিযুক্ত করেছিল, তাদের কাছ থেকেই অপসারণের চিঠি পাওয়ার পরেও তিনি নিজের পদ থেকে যে এখনই সরছেন না, সেটাও বুধবার পরিষ্কার করে দিয়েছেন মি. বরকতি।
“যারা অপসারণের চিঠি দিয়েছে, তাদের কোনও কর্তৃত্বই নেই মসজিদে। তারা কে ইমামকে সরিয়ে দেওয়ার? ওই চিঠির কোনও মূল্যই নেই,” বিবিসিকে জানিয়েছেন মি. বরকতির এক ঘনিষ্ঠ।
সুত্র- বিবিসি