জিপি নিউজঃ আমার শত্রুকেও বলবো না এই পথে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসতে। জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি না। আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনকেও বলবো না, শত্রুকেও বলবো না।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছানো আমিনুল হক একথাই জানালেন বিবিসি বাংলার পুলক গুপ্তকে।
ইউরোপে ঢোকার স্বপ্ন নিয়ে বহু বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে আমিনুল গ্রিসে আসেন গত অগাষ্টে। যেভাবে তিনি ছোট্ট এক রাবারের ডিঙ্গি নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন, তা ভাবলে এখনো শিউরে উঠেন।
তুরস্ক থেকে রওনা দিয়েছিলেন তারা। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে পথ চলার পর কোস্টগার্ডরা সমূদ্রের মাঝখান থেকে তাদের উদ্ধার করে গ্রীসের লেসবস দ্বীপে নিয়ে আসে। দশ মিটার দীর্ঘ ঐ রাবারের ডিঙ্গিতে প্রায় ৮০ জন ছিল। ছিল অনেক নারী, তিন মাস বয়সী শিশু। ছোট্ট নৌকায় এত মানুষের সবার বসার জায়গা পর্যন্ত ছিল না । পথে তাদের বেশ কয়েকবারই বড় বড় ঢেউয়ের মোকাবেলা করতে হয়। নৌকা প্রায় খাড়া হয়ে গিয়েছিল ঢেউয়ের তোড়ে। “তখন আমরা আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। শেষ পর্যন্ত কোন বিপদ ছাড়াই তারা নিরাপদে গ্রিসে পৌঁছেন। কিন্তু আর কাউকে এই বিপদজ্জনক পথে ইউরোপে আসার পরামর্শ দেবেন না আমিনুল হক।
জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে , নৌকায় করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে এ বছরই সবচেয়ে বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এ বছর জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার সাতশ’রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
আমিনুল হকের বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায়। অর্থনৈতিক কারণে তিনি এই পথে ইউরোপে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে এই নৌকায় আরও চারজন বাংলাদেশি ছিলেন।
আমিনুল হক কিছুদিন ইরানে ছিলেন। সেখানে থেকে তুরস্কে আসেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করেছেন। এরপর কিছু টাকা জমিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন। এজন্যে তিনি আটশো ডলার দিয়েছিলেন পাচারকারীদের।
আমিনুল হক কিছুদিন গ্রিসের এক ক্যাম্পে ছিলেন। তাদের এক মাসের জন্য সেখানে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখন তিনি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রিসে আছেন।
সূত্র : বিবিসি