জিপি নিউজঃ কেন্দ্রীয় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখন আরো বেশি দ্বিধাবিভক্ত এবং অগোছাল। বছরের পর বছর হালনাগাদ হয়নি বেশির ভাগ জেলা ও সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর কমিটি। ২০১৪ সালে ঘোষিত ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ৭৩৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এখন বহু উপগ্রুপে বিভক্ত।
একবছরের বেশী সময় পার হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। নতুন কমিটির জন্য ইতোমধ্যে নীরব হাহাকার শুরু হয়েছে মাঠে। গোপনে চলছে গ্রুপিং-তৎপরতা। এসব তৎপরতার মধ্যে সংগঠনটির অভিভাবক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান কমিটিকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সামনে আনার পক্ষে দলীয় হাইকমান্ড। আর এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ছাত্রদলের বর্তমান নেতারা আরও একবার কমিটিতে থাকার জন্য জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
যদিও ছাত্রদলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন, বিএনপির এমন একাধিক নেতা জানান, দু’টি কারণে ছাত্রদলের কমিটি নির্ধারিত মেয়াদ পার করে বাড়তি সময় পার করছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর কমিটি গঠিত হওয়ার পর ১৬ সালের ১৪ নভেম্বরে শেষ এই কমিটির মেয়াদ হয়েছে। এরপর গত বছর নতুন কমিটির দাবিতে ছাত্রদলের ভেতরেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। এরপরও সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনও আলো দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে ছাত্রদল ও বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৯০-এর দশকে সরাসরি খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিল ছাত্রদল। ওই সময় সংগঠনটির কমিটি হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি দেখভাল করতেন আমান উল্লাহ আমান।
বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো হতে জানা যায়, ছাত্রদলের কমিটি আদায়ে সব সময়ই বিএনপির কোনও না কোনও নেতাকে ভূমিকা রাখতে হয়েছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে, কেউ আদায় না করলে সংগঠনটির কমিটি যথাসময়ে হয় না। বিএনপির আগের কমিটিতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক থাকায় বিষয়টি খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের সামনে তিনিই তুলে ধরতেন। যদিও বর্তমান ছাত্রদলের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতার ভাষ্য, কমিটি গঠনে মাধ্যম বন্ধ রাখাই ভালো। একসময় আমান উল্লাহ আমান এ কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও শেষ কমিটিতে তাকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। আর এ্যানি বিএনপির প্রচার সম্পাদক হওয়ায় ছাত্রদলের কমিটি আদায়ে এই মুহূর্তে কোনও কারিগর নেই।
বিএনপির আন্দোলনের মূল ভ্যানগার্ড ছাত্রদল। নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান নেতৃত্বকে বিএনপি ভাঙবে কিনা, এ নিয়ে আলোচনা চলছে । বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মামলা ও আগামী নির্বাচন—এ দু’টি বিষয়কে সামনে রেখে নতুন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সহসা খুলছে না। যদিও ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব এ বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে আছে। কমিটির সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে স্পষ্ট হতে চাইছেন। কমিটি না হলেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩১ মার্চ করার কথা ঘোষণা করেছেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক । ছাত্রদলের একাধিক নেতা মনে করেন, এক্ষেত্রে ছাত্রদলকেও সম্মেলন না করে হলেও প্রয়োজনে চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে কমিটি ঘোষণা করা উচিত।
ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।’
যদিও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ভাষ্য, ‘আমাদের বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ব্যস্ত। তার কোর্টে আসা-যাওয়াসহ সব কিছু মেনটেইন করতে হচ্ছে। এ কারণে একটু সময় লাগছে। যেকোনও সময় একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, দেশের রাজনীতি এখন চরম ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে তবে দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন ।
গত ২ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে খালেদা জিয়া সংগঠনটির নেতাকর্মীদের তিনটি বিষয়ে জোর দিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলকে সুশৃঙ্খলভাবে চলতে হবে। ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলা—এই তিনটি জিনিস অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘ঈমানও ঠিক রাখতে হবে। শৃঙ্খলা ও ঐক্য ঠিক রাখতে হবে। তাহলে সবকিছু জয় করা সম্ভব হবে।’
খালেদা জিয়ার বক্তব্যটিকেও এ্যানি ছাত্রদলের নতুন কমিটির বিষয়ে ইঙ্গিত বলে ধারণা করছেন। ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘ওইদিনের বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসন নতুন কমিটির বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি, শিগগিরই পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি।’
ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্বের জন্য যারা আলোচনায়
বিএনপির গঠনতন্ত্র ও ঐতিহ্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, রাজিব আহসান বা আকরামুল হাসানের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তারা দু’জন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন—এই তিন জনই বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটির সদস্য । তবে আকরামুল হাসান ও মামুনুর রশীদ মামুন নতুন কমিটিতে থাকার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের ইচ্ছার বিষয়ে জানা গেছে। প্রত্যেকেই নিজের প্রকাশে অনীহা জানালেও সভাপতি বা সেক্রেটারি প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বর্তমান সভাপতি, সেক্রেটারি ও সিনিয়র সহ-সভাপতির বাইরে যাদের নাম ইতোমধ্যে ছাত্রদলে আলোচনায় এসেছে, তারা হলেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফীন, নুরুল হুদা বাবু, ফয়েজ উল্লাহ্, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সুমন দেওয়ান, সাহিত্য সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী অন্যতম ।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা অপেক্ষাকৃত তরুণদের কমিটি দেওয়ার পক্ষে থাকলেও আসন্ন কমিটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান। বিগত দিনে যারা রাজপথে ছিলেন এবং যাদের ওপর কেন্দ্রীয় নেতাদের আস্থা বেশি, তাদেরই কমিটিতে সামনে আনা হবে।
সবমিলিয়ে ছাত্রদলের আগামী কমিটি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে সর্বত পর্যন্ত চলছে ব্যাপক আলোচনা ও তৎপরতা।
