জিপি নিউজঃ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্মেলন কক্ষে অ্যাকশন ফর সোশাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত সংলাপে তিনি এ আহ্বান জানান। সংলাপে জানানো হয় বিদায়ী বছরে ৯৪৯ জন শিশু হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪৮ জন ধর্ষণ, ৬৬ জন গণধর্ষণ, ১৮ জন ধর্ষণের পর হত্যা, ৬১ জন পিটুনির, ৭ জন পিটিয়ে হত্যা, ২৫ জন পর্ণোগ্রাফির, ৪৮ জন মা-বাবার দ্বারা হত্যা ও ১৫২ জন অপহরণের শিকার এবং ২৪ জন নবজাতকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আগের বছর ২০১৬ সালে ৮৭৭ জন শিশু হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়। ‘শিশুসুরক্ষা: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, রাকিব-রাজন হত্যাকারীদের মতো শিশুহত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ কমে আসবে। এজন্য নির্যাতিতের পাশে সকলকে সম্মিলিতভাবে দাঁড়াতে হবে। এএসডি উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তৃতা করেন বিচারপতি মো. নিজামুল হক, শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ, মানবাধিকারকর্মী মো. এাহবুবুল হক, সমাজ সেবা কর্মকর্তা কে এম শহীদুজ্জামান, শিশু বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন এএসডি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ইউকে এম ফারহানা সুলতানা। সংলাপে প্রধান অতিথি বলেন, শিশু অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক। তবে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এজন্য জাতীয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ের শিশু বিষয়ক কমিটিগুলো সক্রিয় করা দরকার। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে শিশু কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ চলছে। শিশু অধিদপ্তর গঠনেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকার এ সকল বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংলাপে উত্থাপিত প্রস্তাবের আলোকে শিশু সুরক্ষায় ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন এএসডি উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, বস্তিবাসী শিশু, পথ শিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুসহ অবহেলিত শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি শিশুহত্যা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বছরের অন্তত: দু’টি দিন শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে তাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সুপারিশ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে এসকল প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়। সংলাপে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ৩৪ লাখ শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৩২ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৯ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে এবং এক লাক ৭৭ হাজার ৫৯০ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। আর ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে জড়িত।