আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেতে চান পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও বেশ কিছু আমলা। সংসদ নির্বাচনের ঢের সময় বাকি থাকলেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমনটা ধরে নিয়েই রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি এবার অনেক পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও আমলা বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন তৃণমূলে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে টানার পাশাপাশি বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত তারা। পেশাজীবী অনেক নেতাকে কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে যাতে তারা এলাকায় পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান। মনোনয়নপ্রত্যাশী পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং আমলার মধ্যে অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এরবাইরেও তারা পেশাজীবী হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পেশাজীবীদের অনেকের সাথে আলাপকালে এসব জানা গেছে। তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে খুবই আন্তরিক। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেয়া হবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী বা সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য যেকোনো পেশা থেকেই প্রার্থী হতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু প্রার্থী মনোনয়নে সেটাই হবে মুখ্য বিষয়।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও আমলাদের মধ্যে রয়েছেনÑ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বরগুনা-২, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বরিশাল-৩, মাহবুব উদ্দিন খোকন নোয়াখালী-১, জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সভাপতি ও বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ কুমিল্লা-৫, জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী চট্টগ্রাম-২, ডা: এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু গাজীপুর-৩, অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম লাবু পিরোজপুর-২, অধ্যাপক ডা: মাইনুল হাসান সাদিক গাইবান্ধা-৩, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু দিনাজপুর-৩, প্রকৌশলী আফজালুর রহমান সবুজ শরীয়তপুর-৩, ডা: শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান চট্টগ্রাম-৭, বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ ও তরুণ চিকিৎসক ডা: ফাওয়াজ হোসেন শুভ চট্টগ্রাম-৫, শিক নেতা অধ্য সেলিম ভূঁইয়া ঢাকা-৫, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বাগেরহাট-৪, শিল্পপতি আবুল কালাম (চৈতি কালাম) কুমিল্লা-৯, দৈনিক আমার দেশের পরিচালক শাকিল ওয়াহেদ সুমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, সুনামগঞ্জ-৫ থেকে প্রকৌশলী সৈয়দ মুনসিফ আলী, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন নীলফামারী-৪, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া নরসিংদী-৩, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম জামালপুর-১, ব্যারিস্টার হায়দার আলী শেরপুর-২ এবং কুমিল্লা-১১ থেকে ডা: এ কে এম মহিউদ্দিন ভুইয়া মাসুম মনোনয়ন চাইবেন। তবে কুমিল্লা-১১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিশদলীয় জোটের প্রার্থী। তিনি অতীতেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর বাইরেও অনেক পেশাজীবী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, বরগুনা-২ আসনে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে আর কেউ নেই। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও খোঁজ রাখছেন। বিগত নির্বাচনে তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়। এবারো তিনি ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে তার সমর্থকেরা মনে করেন।
জানতে চাইলে ইউনাইটেড হাসপাতালের লিভার বিশেজ্ঞ ডা: ফাওয়াজ হোসেন শুভ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অতীতের তুলনায় আগামী নির্বাচনে তরুণ এবং কিন ইমেজের লোকদের এমপি মনোনয়নে প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তরুণ এবং কিন ইমেজের কারণে চট্টগ্রাম-৫ আসনে তার অবস্থান ভালো। আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে পারবেন। তবে এ আসনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির এবং তার ছেলে মীর হেলাল প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় (বাগেরহাট-৪) বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রতীকে কেউ নির্বাচন করেনি। সে জন্য জাতীয়তাবাদী আদর্শের ভোটাররা হতাশ হয়ে পড়েছেন। মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা কোণঠাসা বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। দলীয় প্রার্থী না থাকায় সাংগঠনিক অবস্থায়ও তিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ জন্য এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আমাকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।
সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলাকায় গিয়ে স্থানীয় মানুষের সাথে সময় কাটাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।
গাইবান্ধা-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা: মাইনুল হাসান সাদিক বলেন, তিনি এলাকায় বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জনগণ তাকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি বিজয়ী হবেন। তবে এ আসনে ধানের শীষে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. মিজানুর রহমান মাসুমও তৃণমূলে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, তিনি দিনাজপুর সদর আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। তারা একজন সৎ, যোগ্য এবং দক্ষ মানুষকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। কেননা দিনাজপুর সদর আসনে নির্বাচন করেছেন খুরশিদ জাহান চকলেট। তার মৃত্যুর পর জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান নির্বাচন করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা যাওয়ায় এ আসনে তেমন শক্ত প্রার্থী নেই। এলাকার মানুষ এখন তাকেই নির্বাচনে দেখতে চান।
ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী বলেন, তার এলাকার লোকজন তাকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে জানান। অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম লাবু বলেন, পিরোজপুর-২ আসনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এলাকার লোকজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবেন। প্রকৌশলী আফজালুর রহমান সবুজ বলেন, শরীয়তপুর-৩ আসনের তৃণমূলে তিনি গণসংযোগ রাখছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি সেখান থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন।
সুত্র- নয়াদিগন্ত